চোখ মেলেই সামনে একটি মাঝারি সাইজের ঝুড়ি, চারপাশটা সুন্দর রিবন দিয়ে সাজানো। দেখেই তো আইশাহর চোখ কপালে!
আম্মুউউউউউউউ,
- আগে ফ্রেশ হয়ে নাও, এরপর নাস্তা খেয়ে এটা আমরা খুলবো ইন শা আল্লাহ্, ওকে মা?
- ওকে! এটা কী আমার রামাদান গিফট আম্মু?
- জি।
একলাফে বিছানা থেকে নেমে হুড়মুড়িয়ে ওয়াশ্রুমের কাজ সেরে নাস্তার টেবিলে আইশাহ। যেখানে প্রতিদিন তার এক ঘন্টা লাগে এই পর্যন্ত আসতে!
নাস্তা দিতে দিতে মুচকি হাসলো আইশাহর আম্মু। রামাদানের আর সপ্তাহ খানেক বাকি। আইশাহ কে কিছুদিন আগে বলেছিলো বাবা ওর জন্য রামাদান গিফট রেডি করছে। সেদিন থেকে মেয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে কবে পাবে সেই গিফট! আর আম্মুর মাথা খারাপ অবস্থা করে ছাড়ছে, কী সেই গিফট জানার জন্য।
-আম্মু খাওয়া শেষ, আলহামদুলিল্লাহ! এবার চল না খুলি?
- যাও ঘরে গিয়ে বসো আমি আসছি।
ঘরে গিয়ে ঝুড়ি সামনে নিয়ে বসে ভেতরে উকি ঝুকি দেওয়া শুরু করলো আইশাহ! বই দেখা যায়, কয়েকটা বক্স, একটা বড় কী যেন র্যাপিং পেপার এ মোড়ানো। আর অনেক গুলো কাগজ। - আইশাহ তোমাকে না বলেছি রামাদান আসছে ইন শা আল্লাহ্ আর কিছুদিন পর?
- হ্যা আম্মু মনে আছে তো আমার, এটা আগে খুলো না!
- আগে আমার কথা শুনতে হবে। এগুলা সব তোমার জন্য। কোনটার কী কাজ আর কেন তুমি পেয়েছো এগুলো সেগুলো আগে বুঝতে হবে যে মা৷
- আচ্ছা বল। মুখ ফুলিয়ে বলল আইশাহ। তর সইছে না যে ভেতরে কী আছে জানতে!
- রামাদান তো আমাদের অনেএএএএক বড় মেহমান, মেহমান আসার আগে আমরা কী করি বল তো? সারা বাড়িঘর গুছিয়ে সুন্দর করে রাখি তাই না? রামাদানের জন্যেও আমরা ঘর শুধু গোছাবই না ইন শা আল্লাহ্ সাজাবোও!
- তাই! কীভাবে?
- ঝুড়িতে কিছু সাজানোর জিনিস আছে সেগুলো দিয়ে আমরা ঘর সাজাবো কেমন?
আর বেশ কিছু গিফট আছে তোমার জন্য যেগুলো বাবা আর আম্মু খুশি হয়ে তোমাকে দিয়েছি কারন তুমি আমাদেরকে অনেক কাজে হেল্প করেছো, অনেক কথা শুনেছো মা শা আল্লাহ্ এবং ঘরের অনেক কাজ করতে শিখেছো। - কী কী কী বল না প্লিজ সেগুলা কী?
- চল তো খুলেই দেখি সেগুলো কী!
ঝুড়িতে থেকে প্রথমেই র্যাপিং পেপারে মোড়ানো বড় জিনিসটা বের করা হলো, কাগজ খুলতেই বের হল বড় একটা ডক্টর সেট! - এটা তুমি অনেক দিন ধরে চেয়েছিলে আইশাহ, তুমি ভালো কাজ করেছো দেখে বাবা খুশি হয়ে এটা তোমার জন্য এনেছে।
- জাযাকাল্লাহ খাইরান বাবাকে, আম্মু! আমি তো অনেএএএএক খুশি হয়েছি! সবগুলো দাত বের করে খেলনাটা জড়িয়ে ধরলো আইশাহ।
- এরপর এটা হলো ড্রইং খাতা, রঙ আর তুলি। তোমার না ছবি আঁকতে অনেক ভালো লাগে? রামাদানে আম্মু যখন লেখাপড়া করব তুমি তখন আম্মুকে বিরক্ত না করে ছবি আকবে অথবা খেলা করবে কেমন? আরো আছে এই দেখো মজার মজার গল্পের বই। কুর আনের গল্প! আমরা প্রতিদিন এখান থেকে গল্প পড়বো আর নতুন একটা করে আরবি শব্দ শিখবো। যেই শব্দটা শিখবো সেটা এই কালারফুল পেপারে লিখে দরজায় স্টিক করে রাখব। এভাবে ৩০ দিনে ৩০টা নতুন শব্দ শিখে ফেলা যাবে ইন শা আল্লাহ্। আর দরজায় স্টিক করা থাকলে বার বার রিভিশান দেওয়াও সহজ হবে।
- হ্যা আম্মু আমি তো কয়েকটা পারি! যেমন সূর্য কে বলে শামস!
- মা শা আল্লাহ্! আরো নতুন নতুন শব্দ শিখলে আরো মজা হবে তাইনা?
- হ্যা হ্যা, আম্মু ঠিক বলেছো!
- এখানে দুটো ছোট ছোট বক্স আছে একটা সাদাকা বক্স তুমি প্রতিদিন আব্বু আম্মুর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বা কয়েন নিয়ে জমাতে পারো রামাদান শেষে সেটা আমরা সাদাকা করে দিব ইন শা আল্লাহ্।
- ইয়েএএএএ! সাদাকা করলে আল্লাহ খুশি হয়ে যাবে আর আমাদের কে আরো বাড়িয়ে দিবেন সব কিছু তাই না?
- ইন শা আল্লাহ্ আম্মু। আরেকটা বক্স দেখো খুব সুন্দর করে সাজানো, এটা কে বলে “Good deed jar” এখানে ৩০টা ভাল কাজ ৩০টা কাগজে লেখা আছে, প্রতিদিন একটা বের করে সেটাতে যা লেখা থাকবে সেই কাজটা করে ফেলতে হবে তোমাকে ঠিক আছে?
- ওকে ইন শা আল্লাহ্! ভালো কাজ করলে আল্লাহ আরোওওওও খুশি হয়ে যাবেন।
- হুম, আর প্রতিদিন আমাদের ভালো কাজ করার অভ্যাস ও হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্।
- আর এটা অনেক বড় একটা খালি বাক্স। তুমি তো জানোই নিজের পছন্দের জিনিস্টাই কাউকে দান করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন। তোমার যেই জামা আর খেলনাটা তোমার ভালো লাগে কিন্তু খুব একটা পড়া হয়না বা খেলা হয়না এমন জিনিসগুলো তুমি এই বক্সে জমাবা যার ভালো খেলনা বা জামা নেই যেই বাবুগুলো অনেক কষ্টে থাকে আমরা এই বক্সটা তাকে দিয়ে দিব ঠিক আছে?
আইশাহর এই কথা শুনেই মুখটা ছোট হয়ে গেল! - আম্মু, আমার পছন্দের টা তো আমার দিতে কষ্ট হবে। আমার তো দিতে ইচ্ছা করে না!
- এই যে তোমার কষ্ট হচ্ছে এটার বিনিময়ে তুমি অনেএএএএক rewards পাবে ইন শা আল্লাহ্। তুমি না জান্নাতে যেতে চাও? তাহলে জান্নাতে যেতে হলে অনেএএএক কিছু পেতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে।
দেখো, যেই বাবুটার একটাও খেলনা নেই, সব সময় ছেড়া জামা পরে থাকে ওর কী কষ্ট হয়না বল? ওরা তো ভালো খাবারো পায়না খাবার জন্য। কতো কতো বাবুর বাবা মা নেই, তাদের তো আরো কষ্ট। সবাই ওদের বকা দেয় রাস্তায় ঘুমায় না খেয়ে থাকে। ওদের জন্য তোমার কষ্ট হয়না বল?
আইশাহর চোখ ততক্ষণে টলটল করছে পানিতে। - ঠিক আছে আম্মু, আমার লেগো সেট আর গাড়ি গুলো দিয়ে দিব আর ওদের যদি কালার করতে মন চায় তাই আমার পুরানো কালার পেন্সিল আর তুমি একটা খাতাও কিনে দিও। ড্রেস আমি পরে খুজে বের করব কোনটা কোনটা দিব আচ্ছা? আর আমার জন্য চকলেট কিনলে একটা চকলেট বেশি কিনবা আমার এখন চকলেট ও দিতে ইচ্ছা করছে!
আইশাহর আম্মু মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ওকে!
আরেকটা ব্যাগ বের করে আনলো ঝুড়ি থেকে - এটা হল ঘর সাজানোর জিনিস। এখানে সুন্দর কালারফুল কাগযে RAMADAN লেখা আছে। সেই সাথে অনেকগুলো ল্যান্টার্ন আর ফুল ও আছে। সেই সাথে ছোট বলের মতো বেশ কিছু এল ই ডি লাইট ও আছে।
- আম্মু চল এখনই শুরু করি।
- উহু, এখন না! আগে আমরা ঘর পরিষ্কার করব এরপর সাজাবো ইন শা আল্লাহ্! এখন তুমি এগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখো।
- আম্মু একটা এক্টুসখানি সাইজের ডাইরি! দেখো কী সুন্দর! এটা দিয়ে আমি কী করব!
- ওহ এটা তো চোখেই পড়েনি!
- এটা তে আমরা লিখে ফেলবো তুমি এই রামাদানে কী কী দুয়া চাইবে আল্লাহর কাছে।
- হ্যা হ্যা, আমি তো ভুলেই যাই! আমি বলব তুমি লিখে দিও ওকে?
- অকে ইন শা আল্লাহ্। এবার যাও জলদি সব গুছিয়ে রাখো!
জিনিসপত্র নিয়ে যেতে যেতে আইশাহ নিজে নিজেই বলছে, আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি খুশিতে, এত্তোকিছু এত্তোগুলা কাজ। কখন যে শেষ হবে! কখন যে রামাদান আসবে….
আইশাহর আম্মু হাফ ছেড়ে বাচলো! আলহামদুলিল্লাহ! বাচ্চাদের ছোট ছোট বিষয়গুলো বুঝানো খুব সহজ যদি ওদের মতো করে সেগুলো বুঝানো যায়। আইশাহর আব্বু বেশ কিছুদিন ধরে জিনিসগুলো রেডি করে দিয়েছে ওর জন্য তবে বোঝানোর দায়িত্বটা মায়ের উপরই পড়েছে। নাহলে বাপ মেয়ে কথা বলতে শুরু করলে কোন কথা থেকে যে কোন কথায় চলে যায় কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না।
যাই শুরু করে দেই নতুন মেহমান আসার প্রস্তুতি। সবে তো বাচ্চার কাজ গোছানো গেল। নিজেদের তো কতো কাজ গোছানো এখনো বাকি!
আইশাহ’র রামাদান
-সাকিবা আহমেদ
(১২/০৫/২০১৯)