গত কিছুদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা আল’হামদুলিল্লাহ। জ্বর বিছানা বিস্তর নিয়ে একেবারে কিছুদিনের জন্য চলে আসে আসে ভাব কিন্তু আসেনা। জ্বরের কষ্টের চেয়ে জ্বর জ্বর ভাবের কষ্টটা মনে হয় বেশি হয়। অসুখ বিসুখ কেউই ডেকে আনতে চায়না তবে এসে গেলে বিরক্তিকর মনে করে তার সওয়াবগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়াটা আরও বেশি কষ্টদায়ক।
একটা লেকচারে শুনেছিলাম, এক সাহাবী প্রচন্ড জ্বরে পতিত হলেন। এমন জ্বর সচরাচর আসেনা কারও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে গিয়ে বললেন অসুখ বিসুখ আল্লাহর নিয়ামত (যেহেতু এতে গুনাহ ঝরে) অতএব সবর করে এর সুফল নিতে বললেন। জ্বরে কাতর সেই সাহাবী (রাঃ) শরীরের কষ্টে বলে ফেললেন “না, এই অসুখ আমার জন্য আযাব ছাড়া আর কিছু নয়।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব মনে কষ্ট পেলেন এবং বললেন “ তবে তাই হোক “ অর্থাৎ এই অসুখ কে তিনি (রাঃ) আযাব মন করলে তা উনার জন্য সেটাই বয়ে নিয়ে আসবে।
মুমিন যে কোন ধরনের অসুখ বিসুখ, দুঃখ কষ্টে পতিত হলে হতাশ বা বিরক্ত না হয়ে যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ামত মনে করে সবরের মাধ্যমে তা অতিক্রম করে তবে সে গুনাহ মাফের পাশাপাশি সওয়াবের ভাগীদার হয়ে যায় আর যদি সে তার প্রতি বিরক্তি বা আযাব সমতুল্য মনে করে তবে সে সওয়াবের অংশ থেকে বঞ্চিত হয় ।
মাঝে মাঝে ভাবি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য জান্নাত কে কতটা সহজলভ্য করে দিয়েছেন নানা ভাবে অথচ আমরা আমাদের ফিতরাতের কারনে কিংবা নফসের গোলামী করতে গিয়ে এইসব সুযোগগুলোর কদর করা থেকে বিরত থাকি ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলেন, আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারণা অনুযায়ী।”
আপনি আপনার রবের প্রতি কি ধরনের ধারনা রাখেন তার উপর নির্ভর করে আপনার সাথে আপনার রবের সম্পর্ক কেমন ।
“ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।” [ সুরাহ বাক্বারা, ১৫৬]
এর আগের আয়াতে (১৫৫নং) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাকে সুসংবাদ দিয়েছেন এবং এর পরের আয়াতে (১৫৭ নং) এসে আপনাকে আপনার রব বলেছেন,
“ তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।”
আপনি যদি বিশ্বাসী বান্দা হন, তবে কষ্ট ছোট হোক কিংবা বড়, এই আশ্বাসের কাছে তা খুবই তুচ্ছ । নিতান্তই তুচ্ছ …
সবর, নাকি আযাব?
– নুসরাত জাহান
(০২/০৩/২০১৯)