কেউ যদি আপনাকে নাকে খত দিতে বলে অথবা মাথা মুড়িয়ে দেয়, তখন আপনি কি করবেন?
রেগে যাবেন? নাকি অপমানে অস্থির হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়বেন?
যাই করুন না কেন, আপনার অহংবোধে যে ঘা লাগবেই এতে কোন সন্দেহ নেই!!
তার ওপর যদি আপনার বাহারী কাপড়, আরামদায়ক ঘর নিয়ে নেয়া হয়? বিছানা ছেড়ে ভূমিতে শয্যা পাততে বাধ্য হোন? তখন কি করবেন?
আমি বলছি….
প্রথম অপমানিত বোধ করবেন, এরপর একটা পর্যায়ে মেনে নেবেন ও ধীরে ধীরে আপনার মনের সব চেয়ে গোপন অহংকারটিও বিলীন হওয়া শুরু করবে!
হজ্জ এ ঠিক এই কাজটিই কিন্তু হয়!!
আমাদের রব তাঁর মেহমান হবার সৌভাগ্য পাওয়ার জন্য, তাঁর ভালোবাসা পাবার জন্য, আমাদের যাবতীয় অহংকারগুলোকে চূর্ণ করতে দেন।
রব এর ঘরে গেলে আমাদেরকে সবার আগে স্বীকার করতে হবে, সর্বশক্তিমান ও সকল অহংকারের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা!
সে জন্য প্রথমেই আমাদের সকল অহমিকা ত্যাগ করতে হবে। নিজ গৃহের আরাম, জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক ছাড়তে হবে, পুরুষদের মাথা মুণ্ডন করতে হবে! ভরা ময়দানে মাটিত নাক লাগিয়ে সেজদা করতে হবে!!
বাহ্যিকভাবে বিনয়ী হবার সাথে সাথে অন্তরকেও বিনয়ী করতে হবে।
আর্থিক অবস্থান, বংশ মর্যাদা, গায়ের রঙ, ধনী দেশের নাগরিকত্ব, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি যেসব বিষয় নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি……..
তার প্রত্যেকটি জিনিস, হ্রদয়ের গহীন থেকে খুঁড়ে বের করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে।
শুধুমাত্র তখনই….
আপনি হজ্জ/উমরাহ্ এর ‘অন্যরকম অপার্থিব” অনুভূতি, “অবিশ্বাস্য মানসিক প্রশান্তি”র স্বাদ পাবেন।এবং আল্লাহ্ সুযোগ দিলে অনেক অনেক ‘মিরাকল’ দেখতে পারবেন!!
হজ্জ থেকে ফিরে এসে কেউ যদি সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হতে চায়…
তবে তাকে…
চেষ্টা করতে হবে মনের সব কলুষতা, অহংকার, সংকীর্ণতা বিসর্জন দিতে। খাঁটি ভাবে চেষ্টা করলে, অবশ্যই মালিক সহজ করে দেবেন।
অনেকে মনে করেন, মক্কায় গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু দিনে, নির্দিষ্ট কিছু কাজ রোবটের মতো করে ফেলাকেই হজ্জ বলে!!
তারা আরো ভাবেন, সেখানে সব কিছু নিজের প্রত্যাশা মোতাবেক হবে, কোথাও কোন সমস্যা হবে না..ইত্যাদি ইত্যাদি!!
অত:পর সৌদিতে গিয়ে যখন দেখেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, লাইনের পেছনের লোক ধাক্কা দিচ্ছে, সময়মত গাড়ি ছাড়ছে না…. তখন এই মানুষগুলো রেগেমেগে সৌদিদের ও সংগের হাজ্জিদের গুষ্টি উদ্ধার শুুরু করেন!
মানুষ কত অসভ্য জংলী ইত্যাদি চিন্তা করে হা পিত্যেশ করেন, মুখ খারাপ করে অনেক সময় গালাগালিও করেন!!
তাদের আশা ভংগের অন্যতম কারন হলো, হজ্জে যাবার আগে এদের কেউ শেখায় না যে,
হজ্জ শুধু আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত নয়! এটি একটি মানসিক ইবাদত। এখানে আমাদের নিরহংকারী হয়ে, প্রভুর সামনে, প্রয়োজনে আপন স্বত্বা ভূলে যেতে হবে।
কোন কিছুতেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না। কোন বিপদ হলে, তাকে পরীক্ষা হিসেবে নিয়ে আল্লাহ্ এর সাহায্যের অপেক্ষা করতে হবে।
রাহমানুর রাহীম তার মেহমানকে অবশ্যই সাহায্য করবেন, এ ব্যাপারে নি:সন্দেহ থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে, হজ্জ কে জিহাদের সাথেও তূলনীয় করা হয়েছে!
অতএব এখানে কিছু কিছু কষ্ট অবশ্যই করতে হবে।
অনেক স্থানে ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হবে।
সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্ এর উপর ভরসা করে, বিনয়ের সাথে ধৈর্যশীল হলে..
যাবতীয় কাজ সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাবে….. ধীরে ধীরে হজ্জের আশ্চর্য সব সৌন্দর্য উন্মোচিত হতে থাকবে ইন শা আল্লাহ্!
মনে রাখবেন, কবুল হজ্জের প্রতিদান হল জান্নাত! জান্নাত পাওয়ার জন্য কয়েকটা দিন কষ্টও কি করবেন না?
হজ্জ মাবরুর
-রৌদ্রময়ী এডমিন
জুলাই ১৭, ২০১৯ইং