আশেপাশে কেউ নেই কথা বলার মতো!
সারাদিনের কাজগুলো সেরে অবসরটুকু খুব যন্ত্রণাময়। ছোটছোট টুকটাক কথাগুলোও ভেতরে জমে বরফের পাথরখন্ড হয়ে জমে থাকে।
অথবা, পাশে মানুষজন থাকলেই কি! “আমাকে বুঝবে,সঙ্গ দেবে সুখেদুঃখে,মুখের দিকে তাকিয়েই যে অনেককিছু বুঝে নেবে,সংকটময় সময়গুলোয় কাধে হাত রেখে বলবে ‘You r not alone, i’m here with you’
-এমন সঙ্গী যে কেউ নেই এটাই তো মুল নিঃসঙ্গতা।”
বেলাশেষে সবাই একা, বড্ড নিঃসঙ্গ!
তাই না? খুব ব্যস্ত কিংবা সুখী মানুষটাও কাজের ফাঁকে কোন এক মুহুর্তে আনমনা হয়ে ভাবে -‘আসলেই কেউ কারো না’।
বুক ফুড়ে হঠাৎ একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস এসে ফিরে যায়।
আর আমরা খুজে ফিরি -কিসে ঘুচবে এই একাকিত্ব?
সমাধানে খুজে ফিরি অবিবাহিতরা বিয়ের আর বিবাহিতরা ঝিয়ের।
এটা সহজাত,খুব সহজাত। সত্যি বলছি।
হতে পারে,আপনার নিঃসঙ্গতাই আপনার জন্য সব’চে বড় blessing! Let’s turn it ,inshaaAllah.
কখনো ভেবেছেন, হাজেরা(আঃ) যখন জনহীন কা’বা চত্তরে দিনের পর দিন কাটাচ্ছিলেন, তখন তিনি নিঃসঙ্গ ছিলেন।
মারিয়াম (আঃ) যখন প্রসব বেদনায় জনহীন প্রান্তরে খেজুর তলায় ছটফট করছিলেন,তখনো তিনি নিঃসঙ্গ ছিলেন,সামনে ভয়ানক বিরূপ পরিস্থিতি ছিল আসন্ন।
চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, প্রসবকালীন সময়টায় একটা মেয়ে সব’চে বড় সাপোর্ট স্বামী কিংবা মায়ের কাছে। তাঁর কে ছিল?তিনি কতটা নিঃসঙ্গ বোধ করেছিলেন!
কতটা নিঃসঙ্গ-ব্যথিত হলে একজন মানুষ বলতে পারে -“হায়,মৃত্যু যদি এসে আমাকে আগেই নিয়ে যেত!”
আয়িশা(রাঃ)! তরুনী বয়সে পা দিতেই হয়েছেন বিধবা।বছর দুই বাদে শেষ ঠাই বাবাও তো গেল। কতটা নিঃসঙ্গ হয় একজন একজন বালিকা-বিধবা তরুনী,সারাটা জীবনই যেখানে পড়ে আছে বাকি না আছে স্বামী না সন্তান…বড্ড একা! ফিল করতে পারেন??
আছিয়া(আ) চারপাশে ফেরাউনের দোসর,চোখ মেললেই! প্রিয় স্বামী,পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে চারপাশের প্রতিটি মানুষই যখন প্রতিকূল; কেউ বুঝে তাঁকে, কেউ বুঝতেও চায় না, বোঝানোও সম্ভব নয়- কত আকূলতা তাঁর মনে সত্য রব্বের প্রতি; কতটা কষ্ট প্রিয় স্বজনদের নিশ্চিত জাহান্নামের পথে চলতে দেখার কষ্ট। চারদিকে হাজার লোকের ভীড় তবুও তিনি একা, নিঃসঙ্গ!
এই মানুষগুলো কি করেছিলেন সেই নিঃসঙ্গতায়??
– সবার জানা। সেই নিঃসঙ্গতাগুলোই তাদেরকে হাজার হাজার বছর ধরে স্মরনীয় করেছে, জান্নাতে করেছে রানী!
আমি/আপনি হয়ত ভাববো-
“তাঁরা তো অনেক স্ট্রং ঈমানের মানুষ ছিলেন, আমরা দূর্বল, তাদের সাথে তুলনা দিলে তো হবেনা! “
– অন্ততঃ এইটুকু তো বিশ্বাস আছে যে, “মানুষ” ছিলেন? তাহলেই হবে!
নিজেদের কথাগুলোই ভাবি-
খুব একা লাগে। যদি সঙ্গী কেউ থাকতো!!
– আছে তো। হয়তো আল্লাহ, আর নইলে অবশ্যই শয়তান। খেয়াল করেছেন গুনাহের চিন্তা কখন মাথায় আসে?
আজ আপনার সঙ্গী নেই। ভাল! যদি একজন খারাপ সঙ্গী থাকতো?? যে আপনার কানের সামনে ম্যাক্স ভলিউমে মিউজিক প্লে করত, অথবা পর্ন মুভি দেখার কিংবা একদিন হিজাব ছাড়া স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখার বায়না করত, অথবা, আপনার রুমে রেগুলার গীবতের মহড়া বা প্রেমালাপ চলত??
তাহলে একাকিত্বের চেয়ে কি তা ভাল হতে পারত?
At this point , is loneliness not a blessing?
তবে মানুষ তো একা থাকতে পারেনা, তাই কষ্ট হয়। Let’s find out a large benefit from it!
Let’s turn loneliness into utmost blessing.
– যখন একা লাগে, মনে বরফের মত জমতে শুরু করে,
নিজের বিরুদ্ধে হুট করেই কুর’আন টা হাতে নিয়ে নিন, না পারলে মোবাইলে প্লে করুন।
(নিজের ‘বিরুদ্ধে’ বললাম কারন, ওই সময় নফস সায় দিতে চায় না আমি জানি)
-মন দিয়ে শুনুন, অর্থ বোঝার চেষ্টা সর্বান্তকরণে। না পারলে একটা অনুবাদ খুলে সামনে ধরতে পারেন।
চেষ্টা করুন নিজের ভাললাগার সুরাটি/তিলাওয়াতটি বেছে নিতে। স্ট্রং রিমাইন্ডার, কান্না আসবে এমন সুরায় গেলে সব’চে ভাল।
আমার কাছে মনে হয়েছে সুরা হাক্কাহ, মা’আরিজ, সুরা ফাজর, সুরা হুমাযাহ, সুরা কাহফের মাঝের কিছু আযাব/হিসাবের আয়াতগুলো, আরো অসংখ্যা।
– এই স্টেপে অবশ্যই মন অন্যদিকে টার্ন নেবে + সফট হবে।
– তিলাওয়াত করতে থাকলেও কিছু কিছু আয়াতে অকল্পনীয়ভাবে নিজের চলমান পরিস্থিতিগুলোর সাথে সমাধানমূলক/প্রশান্তিদায়ক অনেক কথা পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
– সাধ্যমত সর্বোচ্চ সুন্দর করে তিলাওয়াত করুন,কেউ শুনছেনা দেখছেও না।হেজিটেট ফিল করার বা রিয়া হবার কোন চান্স নাই।
তবে আল্লাহ কিন্তু শুনছেন, আপনি কতটা মধুর করে তাঁরই কথা নিজের মুখে উচ্চারণ করছেন। তাঁকে সবচেয়ে সুন্দর করে শোনান না! তিনিই তো আপনার রব!
.
– দীর্ঘ নির্জনতায় যারা থাকেন, তারা দীর্ঘ সময় নিয়ে মনমত নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। no interference.
লম্বা &/ পছন্দের সুরা তিলাওয়াত করুন।নামাজের বাহিরে তিলাওয়াতের চেয়ে নামাজের ভিতর তিলাওয়াত উত্তম।প্রিয়জনদের সাথে সামনাসামনি কথা বলার মজা তো আলাদাই,না?
– তাঁকে নিজের সামনাসামনি ভেবেই শুনাতে থাকুন। লম্বা সেজদায় পড়ে থাকুন।মালিকের কাছে এই একান্তে যত পারা যায় নৈকট্য লাভ করতে, ততই তো ভাল। তিনি ছাড়া আর কে সহায় হবে বিভীষিকাময় উষর হাশরের মাঠে, মৃত্যুযন্ত্রনার নিষ্ঠুরতায়! তাঁকেই ডাকতে হবে তখন। তাই যতটা তাঁকে আপন করা যায়, যতটা কাছের করা যায়।
– নামাজ,তিলাওয়াত ছাড়া বাকি সময়টুকুতে দ্বীনি বিষয় জানার কাজে লাগান।
– একটা সময় আসবে যখন উপরের সবগুলো করার পরেও টাইম রয়ে গেছে।
বস্তুত: আমরা কাজের ‘টাইম’ পাইনা, কিন্তু অকাজের টাইম আবার অফুরন্ত!
ওই সময় গুলোতে “চিন্তা” করুন।
একটু। কবর কিংবা হাশরের। কখনো কোন কবরের পাশ দিয়ে হেটেছেন?
তাহলে, ওই খানে জাস্ট চোখ বুঝে নিজেকে একটু কল্পনায় দেখুন। যেতে তো হবেই!
বিয়ের আগে সবাই তো টুকটাক বিয়ের পরের স্বপ্ন দেখে কারন বিয়ে তো একদিন করতেই হবে, তাহলে ওইখানেও যেহেতু যাব একটু কল্পনা আসতেই পারে। উচিৎই তো।
-ক্রিয়েটিভ কাজে সময় দিন (অবশ্যই প্রেমের কবিতা বা গানের সুর করতে বা পুতুল বানাতে বলছি না)।
যে কোন ভাল কাজ বা কথা ক্রিয়েটিভ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যা আরো কিছু মানুষের কাজে দেবে।
নিজের সমস্যাগুলো যাস্ট সমস্যা ভেবে হা-হুতাশ করার কোন কারন নেই। যা আপনার সমস্যা,তা আরো অনেকেরই আছে। সমাধান খুঁজে বের করুন।উপকৃত হবে আরো অনেক মানুষ। এর উত্তম বিনিময় আপনি অবশ্যই পাবেন।
– তা না পারলেও কারো কাছে যান, তাকে আল্লাহর দিকে ডাকুন।
-নিজের দুরাবস্থা গুলো প্রাধান্য না দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিন। দুইদিনের জীবন নিয়ে এত stiff হবার কিছু নাই। অন্যদের মাঝে ক্লোজ হয়ে মিশে যান, তাদের মনের ক্ষতস্থান গুলোতে আলতো পরশ দিন, সেরে তোলায় মন দিন।
আপনি নিঃস্বার্থ, পুরো পৃথিবী আপনাকে আপন করে নেবে। একাকি অনুভব করলে কেউ না কেউ এসে আপনার মাথার চুলে আলতো পরশ দেবেই, সামনাসামনি হোক বা যেভাবেই হোক। আপনি ফিল করতে পারবেন, এনিটাইম।
……………………………..
একাকীত্বের অবসরে
খাদিজা তাহিরা
জুন ৩০, ২০১৯ইং