কষ্টের সাথেই স্বস্তি

আপনাদের সাথে কখনো এমন হয়েছে যে শরীরটা খারাপ লাগছে, মাথাটা হয়ত ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে, হাতে এক গাদা কাজ জমে আছে, এদিকে ফোন বেজে যাচ্ছে তো ওদিকে বাচ্চাটা কাঁদছে, হঠাৎ নামল বৃষ্টি, আর তখনই মনে পড়ল ছাদে বালিশ-তোশক রোদে দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে মনে হবে না চিৎকার করে বলে উঠতে, GIVE ME A BREAKKK.

বাস্তব জীবনে কখনওই হয়ত একসাথে এত ঘটনা ঘটবে না, কিন্তু সবার জীবনেই এমন মুহূর্ত আসে যখন মনে হয় জীবন টা খুব কঠিন, এই দায়িত্ব নেয়া আমার সাধ্যের বাইরে, একটা ঘন্টার জন্য হলেও ছুটি চাই ইত্যাদি। এরপর যখন এমন মুহূর্ত আসবে তখন কিছু বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারেঃ

আল্লাহতালা বলেছেন, তিনি কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দেন না। তার মানে, আজকের এই দায়িক্ত, এই পরীক্ষা আপনার সাধ্যের বাইরে নয়। আপনার জন্য পালন করা সম্ভব বলেই আল্লাহ আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআন এ বলা আছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথেই আছে স্বস্তি। আপনার কষ্ট হচ্ছে? আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলুন, এরসাথেই স্বস্তি আসবে। যে কষ্ট পাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশী স্বস্তি আপনাকে শীতল করবে ইন শা আল্লাহ।

আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আপনার আজকের বিপদে আল্লাহ্তালার উপর আস্থা রাখুন। তিনি সর্বশক্তিমান, আপনার কষ্ট দূর করা তাঁর জন্য কোন ব্যাপার নয়।

আমাদের অশান্তির সময়গুলো আমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। এসময়গুলো মোকাবেলা করতে হবে সবর(patience) আর শুকর(thankfulness) দিয়ে।

আমরা বিপদের সময় আমাদের ভালো সময়ের কথা ভেবে সবর করব। আইয়ুব (আ:) কে সন্তান, সম্পদ, স্বাস্থ্য নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। তিনি সবর করেছিলেন। আল্লাহতালা তাঁর উপর সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে সব কিছুই আবার ফেরত দেন। আল্লাহতালা কোরআনে তাঁকে “উত্তম সবরকারী” হিসেবে উল্লেখ করে সম্মান দেন।

বিপদের সময় মাথায় রাখা উচিত যে এর চেয়েও বড় বিপদ আসতে পারত। অথবা এই বিপদ আরো আগে আসতে পারত। শুকর করুন। কৃতজ্ঞ হোন। মন থেকে বলুন ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌’।

আমরা সবসময় নিজের সাথে অন্যকে মিলাই। অমুক তো অনেক খারাপ, তাও কি সুখে আছে, আর আমার জীবনে খালি কষ্ট আর কষ্ট। প্রথমত, প্রতিটা মানুষ পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা সবার কষ্টের কথা জানিনা, তার মানে এই নয় যে তার জীবনটা perfect. দ্বিতীয়ত, তুলনা যদি করতেই হয় তবে যারা স্পষ্টতই কষ্টে আছে তাদের সাথে তুলনা করুন।

সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তানের মা-বোনদের কথা ভাবুন। রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের কথা ভাবুন। আপনার মাথার উপর ছাদ আছে, খাবার আছে, পানি আছে। এক গ্লাস স্বচ্ছ সুপেয় পানি এই পৃথিবীর অনেক মানুষের জন্য বিলাসিতা। এই ঢাকা শহরে অনেক মানুষ রাতে ঘুমায় খোলা আকাশের নিচে, এর চেয়ে আপনি কি অনেক বেশী ভাগ্যবান নন?

এরপরে যখন খুব অস্থির লাগবে অন্তর,তখন নিচের টিপস গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেনঃ

নিজেকে একটু ট্রিট দিন। কিছু একটা বানিয়ে খান। চা, কফি, জুস যেটা আপনার ভাল লাগে। বানিয়ে খাওয়া সম্ভব না হলে কিনে আনুন। ফ্রিজে একটা চকলেট রাখতে পারেন এমন সময়ের জন্য।

নিজেকে প্যাম্পার করুন। ফুট বাথ নিয়ে দেখতে পারেন, অথবা তুলায় ঠান্ডা গোলাপজল নিয়ে চোখের উপর ৫মিনিট দিয়ে রাখুন। অনেক রিফ্রেশড লাগবে। এগুলোর কিছুই যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখে পানির ঝাপ্টা দিন, ভাল লাগবে।

আপনি যদি রেগে থাকেন তবে ওযু করুন। রাগ দূর হবে, মাথা ঠাণ্ডা হবে ইন শা আল্লাহ।

সালাহ পড়ে সিজদায় কান্নাকাটি করুন। সিজদায় কাঁদলে অন্তরে যে প্রশান্তি পাবেন তা অতুলনীয়। আপনার কষ্ট গুলো দূর করা একমাত্র আল্লাহতালার পক্ষেই সম্ভব। এখন আপনি যে অবস্থায় আছেন, তাকে বদলে দেয়ার জন্য এক মুহূর্তই যথেষ্ট। আল্লাহতালার পক্ষে এটা খুব সহজ এটা অন্তর থেকে বিশ্বাস করুন।

আপনার রবের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করুন। জাকারিয়া (আঃ) বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন,তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধা, কিন্তু তিনি আশা নিয়ে আল্লাহ র কাছে দু’আ করেন,আল্লাহ তাকে সন্তান দেন। মুসা (আঃ) এর সামনে ছিল সমুদ্র, আর পিছনে ফেরাউনের বাহিনী। তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন আল্লাহ তাকে পথ দেখাবেন। আল্লাহ তাকে সমুদ্র ভাগ করে পথ করে দেন।

দু’আ করুন বেশী করে। দু’আ কে মুমিনের অস্ত্র বলা হয়। দু’আ কবুল হবে এই আস্থা নিয়ে দু’আ করুন।

লেখালেখি করুন। একটা ডাইরি রাখতে পারেন, সেখানে জীবনে কি পেলেন তার উল্লেখ করুন, কবুল হওয়া দু’আ গুলো উল্লেখ করুন, সারাদিনে পজিটিভ কি হল তাই লিখুন। মন খারাপের সময় মনে হতেই পারে সারদিনে ভাল কিছুই হয়নি, কিন্তু এই যে আপনি বেঁচে আছেন, তওবা করার সুযোগ পাচ্ছেন, এটাই অনেক বড় ব্যাপার।

প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত হোন। গাছপালায় ঘেরা কোথাও থেকে একটু হেটে আসুন। বাসার কাছে এমন সু্যোগ না থাকলে নিজের বাসায় গাছ লাগিয়ে একটু সবুজ করে রাখুন।

হয়ত উপরের অনেক টিপসই আপনার ভাল লাগবেনা। আপনি নিজে ভেবে বের করুন এমন সময় আপনার কি করতে ভাল লাগে। শুধু দুইটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, কাজ গুলো যেন positive & productive হয়।

……………………………………..

কষ্টের সাথেই স্বস্তি
নূরুন আলা নূর
১ নভেম্বর ২০১৮