আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় লেখিকা কেমন আছেন?
আল্লাহ’তালা বলেছেন, “আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন [১] তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও [২]। তারা অভাবগ্রস্থ হলে আল্লাহ্নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ্তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা নূর-৩২)
প্রশ্ন হলো আমাদের সমাজের দিকে এখন তাকালে দেখা যায়! যুবকরা বিয়ে করলে আরো অভাবী হয়ে পড়ে? এটা কেন? যুবকরা বিয়েটাকে ঝামেলা বলে কেন? বিস্তারিত উত্তর চাই।
ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। তবে দুটো কথা। প্রথমত, আমি নিজেকে লেখিকা মনে করিনা, অত জ্ঞান আমার নেই যে মানুষকে দিতে যাব। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, কারো কারো কাজে লেগে যায়, এতটুকুই। সুতরাং, আপুই যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, আমি যুবক নই। কিভাবে বলব আজকালকার যুবকদের সমস্যা কি? সুতরাং, আমি কেবল আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যতটুকু বুঝি ততটুকুই বলতে পারি।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহ যা বলেছেন তা সঠিক। ভুল বুঝাবুঝি আমাদের মানসিকতার দৈন্য এবং বোধের অনটন থেকে উৎসারিত । প্রথমত, আমরা রিজকের ব্যপারটি সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞ। দ্বিতীয়ত, আমাদের অভাব মূলত need এবং wants এর মধ্যে পার্থক্য করায় নিহিত। সুতরাং, আমাদের অভাব মূলত আমাদের নিজেদের সৃষ্ট।
প্রথমত, একটি বৈবাহিক সম্পর্কে বর এবং কনে যার যার রিজক আল্লাহর পক্ষ থেকে বুঝে পায়। বাহ্যিকভাবে কনের রিজক বরের ওপর নির্ভরশীল মনে হলেও মূলত বর এখানে একটি মাধ্যম মাত্র। সুতরাং, কেউ কারোর ওপর নির্ভরশীল নয় বরং উভয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। ধরুন, একটি ছেলে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলো। এসময় তার প্রমোশন হল। মূলত, এটি কনের রিজক যা আল্লাহ তার মাধ্যমে প্রেরণ করছেন। এখানে তার কোন বাহাদুরি নেই। যেটুকু কৃতজ্ঞতা তার প্রাপ্য সেটা মাধ্যম হিসেবে। এতটুকু বুঝলে অভাবের পরিবর্তে কৃতজ্ঞতাবোধ হৃদয়কে আপ্লুত করার কথা।
দ্বিতীয়ত, আপনি আল্লাহর ওপর নির্ভর করলে আল্লাহ রিজক দেবেন, তাঁর দেয়ার ক্ষমতা অফুরন্ত। আপনি শ্বশুরের ওপর নির্ভর করলে তিনি বাধ্য হয়ে দেবেন, কিন্তু তাঁর দেয়ার ক্ষমতা সীমিত। অনেক যুবকই আজকাল কষ্ট করে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবার পরিবর্তে রেডিমেড রিজক চায়। ফলে তাদের রিজকে বারাকাহ উধাও হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, বিয়ের অনুষ্ঠানকেই বিয়ে মনে করার মত একটি সাংঘাতিক ব্যধি বৈবাহিক সম্পর্কের বারাকাহ শুরুতেই নষ্ট করে দেয়। প্রদর্শনেচ্ছা এবং বাহুল্যতার ফলে বরকনে সংসার শুরুই করে দেনা দিয়ে। অথচ এর কোন প্রয়োজন নেই। বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য নতুন সম্পর্কটির বিষয়ে কাছের মানুষদের অবহিত করা এবং তাঁদের কাছ থেকে দু’আ নেয়া। অতিরিক্ত বাহুল্য দু’আর পরিবর্তে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আসে।
চতুর্থত, যেটাকে আমরা অভাব মনে করছি সেটা আদৌ অভাব কিনা। আমরা প্রথম ফার্নিচার কিনি বিয়ের দশ বছর পর, ক্যনাডা গিয়ে, সেকেন্ড হ্যান্ড। তার আগে পর্যন্ত একটি ম্যট্রেস এবং শাশুড়ি আম্মার ছাত্রিজীবনের পড়ার টেবিল আমাদের চারজনের জন্য যথেষ্ট ছিল। খালি অ্যাকুয়ারিয়ামের ভেতর কাপড়চোপড়, বই রাখতাম, তাতে সুখের ঘাটতি হয়নি। আমাদের টিভি নেই, প্রয়োজন নেই। কারণ বই পড়তে পড়তে কারো টিভি দেখার সময় নেই। তাতে কি অসুবিধা হয়েছে? আপনার বিয়ের প্রথম দিন থেকেই ঘরভর্তি ফার্নিচার, লেটেস্ট মডেলের টিভি, বিলাসবহুল গাড়ি লাগবে কেন? তাহলে অভাব জীবনেও দূর হবেনা। কারণ আয়ের সাথে wantsগুলোও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে যেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদতেই আপনার প্রয়োজন নেই।
পঞ্চমত, হবু স্ত্রীকে সন্তানের মা হিসেবে বিবেচনা না করে নায়িকা হিসেবে কল্পনা করার প্রবণতা। ফলে এমন মেয়েদের বিয়ে করা হচ্ছে যাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যই সার। একজন বুদ্ধিমতি নারী এবং একজন বুয়ার সংসার পরিচালনা, সন্তান প্রতিপালনের মানে তফাত থাকবে বৈকি। কিন্তু নায়িকা কি সেজেগুজে শপিংয়ে ব্যস্ত থাকবে না আপনার ঘর সামলাবে? সুতরাং, সংসার চলে যায় বুয়ার হাতে। গৃহের বারাকাহ কমে যায়। চোখের তৃপ্তির জন্য এই ত্যাগ স্বীকার। অভাব তো এখানে নিজেই বেছে নেয়া।
যষ্ঠত, স্ত্রীকে কেবল একটি অর্থকরী প্রাণী হিসেবে দেখার প্রবণতা। একজন নারীকে যদি কেবল আর্থিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে যাচাই করা হয় তখন একজন শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতি এবং পরিশ্রমী নারীর সংসার পরিচালনা এবং সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে অবদানকে কাজের মধ্যে ধর্তব্য গণ্য করা হয়না। এই সার্বক্ষণিক অবদানকে আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয়না বিধায় একজন ত্যাগী নারীর প্রতি অবিচার করা হয়। অবিচারের মাধ্যমে কি প্রাচুর্য আনা যায়? প্রাচুর্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার! স্ত্রীকে কেবল অর্থধ্বংসকারী প্রাণী হিসেবেই দেখলে বিয়ে করা কঠিন বৈকি।
আমার স্বল্পজ্ঞানে এবং সীমিত দৃষ্টিতে এগুলোই চোখে পড়েছে। জ্ঞানীরা নিশ্চয়ই আরো ভাল উত্তর দিতে পারবেন। তাঁদের সাহায্য কামনা করছি।
—————————-
বিয়ে করলে কি অভাব বাড়ে?
রেহনুমা বিনত আনিস
১৩ অক্টোবর ২০১৮