১.
আগের দিনে শিষ্যরা গুরু দক্ষিণা হিসেবে, নব বধুকে প্রথম রাত গুরুর সাথে যাপন করতে দিতো। এটি ছিলো তাদের সম্মান জানানোর এক প্রথা!!
সেদিন এক বিয়ে বাড়িতে গেলাম। নতুন বউ এর দিকে তাকিয়ে আমি সেইরকম লজ্জা পেলাম। এক যুবক নতুন বউ মাথার ওপর ওড়না দিচ্ছে, আবার সরাচ্ছে, কিছুক্ষণ পর ঠিক করে দিচ্ছে! তাদের ব্যবধান এক হাতের বেশি হবে না!
আশে পাশে আরো কিছু যুবক তাদের সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে। বধুর খোঁপার ওপর স্বচ্ছ একটি ওড়না আছে। আর দ্বিতীয় আরেকটি স্বছ ওড়না নিয়ে যুবকটি এই কাণ্ড করছে!!
সে নিজের হাতে কাপড় ঠিক করার পাশা পাশি, গায়ের ওপর ওড়না কতটুকু থাকবে সেই ব্যাপারে মেয়েটিকে ডিরেকশনও দিচ্ছে!!!
তখনো বর আসে নি।
বর আসার আগ পর্যন্ত বউ টি ওদের সম্পত্তি! ক্যামেরা জুম করে, নব পরীনিতার সমস্ত সৌন্দর্য, বাঁকসমূহ বরের আগে তারাই দেখে নিচ্ছে। নায়িকার মতো ছবি আসার জন্য, মেয়েটিও নির্দ্বিধায় নিজের হায়া শরমের মাথা খেয়ে সহযোগীতা করছে।
হ্যাঁ!! এই যুবকদের নাম ওয়েডিং ফোটোগ্রাফার!! যারা স্বামীর আগেই স্ত্রীর সৌন্দর্য যতটুকু সম্ভব উপভোগ করে নেয়।
আপনাদের কি মনে হয়, ফটোগ্রাফাররা পুরুষ নয়! তারা অনুভূতি শূন্য যন্ত্রমানব? অবশ্যই তাদের মাঝে পুরুষের যাবতীয় অনুভুতি বিদ্যমান। কে জানে, তারা নতুন কণেটি র ছবি তুলতে গিয়ে মনে মনে কতটা ফ্যান্টাসি তৈরি করে!
আজকাল বিয়ে বাড়িতে গেলে মনে হয়, সকল কর্মকাণ্ডই শুধু মাত্র “সুন্দর ছবি” তোলার জন্য করা হয়। আর ছবি তোলা হয় ফেসবুকে আপলোড এর জন্য।
এখন তো একেক রাতের ছবি তুলতেই খরচ হয় ৭০-৭৫ হাজার টাকা! বিয়ের সবগুলো প্রোগ্রামে কয়েক লাখ টাকা চলে যায় স্রেফ ছবির পেছনেই।
নিজের স্ত্রীকে একদিনের জন্য রানী হিসেবে দেখাতে গিয়ে, পরপুরুষ এর জুম লেন্সের সামনে নির্লজ্জের মতো বসিয়ে রাখতেও বাঁধে না এ যুগের বরদের!!
এ যেন প্রাচীন আমলের গুরুদক্ষিণার আধুনিক ভার্সন! ফটোগ্রাফার রা গুরু না হয়েও দক্ষিণা পাচ্ছে। আহা! কি ভাগ্য তাদের।
২.
প্রতিনিয়ত এ ধরণের দৃশ্য দেখতে দেখতে শয়তান আমাদের চোখে অশ্লীলতাকেও শোভন করে দিয়েছে। এতটাই শোভন করে দিয়েছে যে, পুরো ব্যাপারটির কদর্যতা আর নোংরামীটাও আজ আমাদের চোখে পড়ে না।
জানি না, কবে আমাদের বোধদয় হবে। এই নববধূদের বাবা, ভাই স্বামীগণ আল্লাহ্ এর কাছে কি জবাব দেবেন? এরা যদি দাইয়্যুস না হয়, তবে দাইয়্যুস কারা?
রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“তিনজন আছেন যাদের দিকে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল কিয়ামাতের দিন নজর দেবেন না। যে পিতামাতার অবাধ্য, ও যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে, এবং দাইয়্যুস ব্যক্তি।”
(সূনান আন নাসাই : ২৫৬২, হাদিস হাসান, আলবানী সাহীহ বলেছেন)
শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন বায বলেছেন:
“দাইয়্যুস হল সে ব্যক্তি যে তার স্ত্রীকে জিনা করার অনুমতি দেয় ও তা থেকে নিজ স্ত্রীকে বিরত রাখেনা, এমনকি আত্মসম্মানের অভাব আর ঈমানের দুর্বলতার কারণে সে আল্লাহর ওয়াস্তে রাগান্বিতও হয়না আর এভাবেই সে তার স্ত্রীর পাপকে স্বীকার করে নেয় )বাধা দেয় না।
মুফতি শাফি উসমানী বলেছেনঃ
দাইয়্যুস হল সেই ব্যক্তি যে তার নির্লজ্জতার ওপর এমন সন্তুষ্ট যে সে তার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের (বিশেষত নারীদের) অসম্মানের পথে চলা থেকে বিরত রাখেনা।(মা’রিফুল কুর’আন, ভলিউম ২ : সূরাহ নিসা আয়াহ ৩১)
সুতরাং ভেবে দেখুন, এক দিনের আনন্দের জন্য, দাইয়্যুস হয়ে যাচ্ছেন না তো??
—————————
দাইয়্যুস
হাসনীন চৌধুরী