হজ্জ ও মদীনার ইবাদাতের কিছু টিপস

হজ্জ ও মদীনার এর ইবাদাত এর কিছু টিপস:

*মসজিদুল হারামে এক ওয়াক্ত সালাতে অন্যান স্থানে সালাত আদায়ের এক লাখগুন বেশি সোয়াব পাওয়া যায়।

অতএব হারাম শরীফে দুই রাকাত দুই রাকাত করে, যত পারুন সালাত আদায় করুন।

* জামাতে সালাত মিস করবেন না। জামাতের সময় সোয়াব ২৭ গুন বর্ধিত করা হয়।

*জানাযার সালাত সব সময় পড়ার চেষ্টা করবেন। মাসজিদুল হারাম ও মসজিদুল নববীতে প্রায় প্রতি ওয়াক্ত এর পর এ সালাত অনুষ্ঠিত হয়।

*যে কোন সালাতের ওয়াক্ত শুরু হবার, সম্ভব হলে ঘণ্টাখানেক আগে মসজিদে অযু করে বসে থাকুন।

তাহলে ভীড় এড়াতে পারবেন ও মসজিদের অভ্যন্তরে।স্থান পাবেন।

*মসজিদের কোন একটি খাম্বার পাশে জায়গা নিয়ে বসতে পারেন। এর ফলে ক্লান্ত হয়ে গেলে হেলান দিয়ে বসতে পারবেন।

* মসজিদে যাবার সময় হাল্কা একটি ব্যাগ সাথে রাখুন। সেখানে ছোট্ট কুরআন, খালি পানির বোতল
(জমজমের পানি ভরে নেবার জন্য), হাল্কা কোন খাবার, খেজুর, টিস্যু বা ফেস টাওয়াল ও জুতা রাখার জন্য পলিব্যাগ রাখুন।

জুতা শেল্ফে রাখলে প্রায়ই হারিয়ে যায়, তাই সাথে রাখা উত্তম। আর ক্ষুধা লাগলে বারবার মসজিদ থেকে বের হলে সময় নষ্ট হয়, তাই সাথে খাবার রাখা ভালো।

* হজ্জে গিয়ে যেসব ইবাদত করতে চান, দেশ থেকেই সে সবের অভ্যাস করুন। যেমন তাহাজ্জুদ এর সালাত। হঠাত করে মক্কায় গিয়ে একদিনের ভেতর নতুন ইবাদতের অভ্যাস করা কঠিন হতে পারে।

* যত বার পারুন তাওয়াফ করুন। তাওয়াফ এমন একটি ইবাদত, যা মসজিদুল হারাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও করা সম্ভব নয়।

সাত চক্করে একবার তাওয়াফ সম্পন্ন হয় এবং একবার তাওয়াফে একজন দাস মুক্তির সমান সোয়াব পাওয়া।যায়।

ফযরের এক দেড় ঘণ্টা পর থেকে নটা/ সাড়ে ন’টা পর্যন্ত তাওয়াফের স্থান কিছুটা ভীড়মুক্ত থাকে। তবে হজ্জ যত এগিয়ে আসবে, চব্বিশ ঘণ্টাই ভীড় থাকবে।

* প্রথম সুযোগেই হাতীমে সালাত পড়ে নিন। পরে ভীড় বেড়ে গেলে আর সুযোগ নাও পেতে পারেন।

কাবা ঘরের সামনের অরধ চন্দ্রাকৃতি স্থানটিকে হাতীম বলে, এক সময় এটি কাবার ঘরের অভ্যন্তরে ছিল।

* তাওয়াফের কোন নির্দিষ্ট দুয়া নেই। শুধু রুকনে রুকনে ইয়ামেনী থেকে হাজরে আসোয়াদ পর্যন্ত, “রাব্বানা আ’তীনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আ’খিরাতি হাসানাতাও ওয়া কি’না আযাবান্নার” দুয়াটি বার বার পরুন।

এবং বাকী সময় কুরআন, হাদীসের দুয়া বা নিজের ভাষায় প্রাণ খুলে দুয়া করুন।

* সাফা মারওয়া সাঈর সময়েও নির্দিষ্ট দুয়া গুলো পড়ার পর প্রাণভরে দুআ করুন। নিজেকে বিবি হাজেরা (আ:) এর মতো নিরুপায় ও করুন অবস্থানে ভাবার চেষ্টা করুন।

* জমজম কুপের পানি পান করার আগে আল্লাহ্‌ এর কাছে মনের আশা ব্যক্ত করুন। এই পানীয় পানের সময় যা চাওয়া হয়, সেই দুয়া কবুল হয়।

*হারাম শরীফে সালাত আদায়ে সর্বাধিক গুরত্ব দিন, এরপর তাওয়াফে। এরপর সময় পেলে বেশি বেশি তিলাওয়াত ও সহীহ যিকির সমূহ করুন।

* প্রায় প্রতিদিন দরিদ্রদের দান করার চেষ্টা করুন। আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন রাহমানুর রাহীম কত বেশি গুনে সেই দান কে বর্ধিত করে আপনার কাছে ফেরত দিচ্ছেন।

*অন্যান্য হাজ্জীদেরকেও খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। যদি তা একটি করে খেজুর হয়, তবুও। আল্লাহ্‌ এর ঘরের মেহমানদের খাবার খাওয়ানোর সুযোগ পাওয়ায় ভাগ্যের ব্যাপার।

* মদীনায় থাকাকালীন সময়েও মসজিদে সালাত আদায়ের চেষ্টা করুন। এই মসজিদে সালাত আদায় করলে যেকোন মসজিদের তূলনায় এক হাজার গুন অধিক সোয়াব পাওয়া যায়। (মসজিদুল হারাম ব্যতীত)।

*রাসুল (সা:) ও তার পাশের যে সাহাবীদের কবর রয়েছে তাদের আদবের সাথে সালাম পেশ করুন।

কিন্তু মৃতদের থেকে কোন কিছু চাইবেন না, তাহলে শিরক হয়ে যাবে।

* মদীনার রিয়াদুল জান্নাতে সালাত আদায় করুন।

*মসজিদে কুবায় সালাত আদায় করুন। ঘর/ হোটেল থেকে ওযু করে বের হয়ে, এখানে দু রাকাত সালাত আদায়ে একটি উমরাহ্‌ এর সোয়াব পাওয়া যায়।

* পুরুষগণ কবর যিয়ারত করুন।

*মনে রাখবেন মদীনায় যাবার উদ্দেশ্য হতে হবে, মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করা। রাসুল (সা:) এর কবর জিয়ারতকে মূল উদ্যেশ্য বানাবেন না।

*সেখানে চল্লিশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা বাধ্যতামূলক নয়।

এই উপমহাদেশীয়রাই এই চল্লিশ ওয়াক্ত কে আবশ্যক মনে করে। অধিকাংশ দেশের মানুষ চার পাঁচ দিনেই মদীনা সফর শেষ করে ফেলে।
.
* মদীনা যাওয়া হজ্জের অন্তর্ভূক্ত নয়। হাজ্জীগণ মসজিদুল নববীতে সালাত আদায়ের বরকত হাসিলের জন্য সেখানে গমন করেন।
*************

হজ্জ এর স্যুটকেস প্যাক করার কিছু জরুরী টিপস:

*যত টুকু নিজে বহন করতে পারবেন, ততটুকু মাল পত্র নিন। বেশির ভাগ স্থানে নিজেকেই বহন করতে হবে।

* স্বামী স্ত্রী একত্রে হজ্জে গেলে, সুই স্যুটকেসে নিজেদের কাপড় ভাগাভাগি করে নিন। এতে যদি একটি লাগেজ হারায়, তারপরো অপর লাগেজে কিছু কাপড় থাকবে।

* স্যুটকেসের হাতলে রঙিন কোন ফিতা বা স্কার্ফ লাগিয়ে নিন। তাহলে লাখ লাখ একই রকম স্যুটকেসের ভীড়ে সহজেই আপনার লাগেজ খুঁজে পাবেন।

* পুরুষরা টাওয়াল কাপড়ের ইহরাম নিন। কারন সাদা সুতির ইহরামের কাপড় পড়লে, তা ঘামে ভিজে স্বচ্ছ হয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। টাওয়াল কাপড়ে গরম লাগবে না, বরং তাপ থেকে বেঁচে থাকবেন।

* মহিলারা সাদা বোরকা নেবেন না। সাদা কাপড় অল্প দিনেই ম্লান হয়ে যায়। যে কারণে বাংগালী হাজ্জিদের খুবই দরিদ্র ও দৈন্য লাগে দেখতে।

*যেসব মহিলারা শাড়ি পড়ে অভ্যস্ত, তারা ম্যাক্সি, পেটিকোট ও উপরে খিমার/ সালাতের ঘোমটা পড়লে আরাম পাবেন।

*কামিয ম্যাক্সির হাতায় ইলাস্টিক লাগালে অযু করার সময় সুবিধা হবে।

* সৌদিতে গিয়ে শাড়ি না পড়াই উত্তম, ভীড়ের মাঝে আছাড় খেলে যেমন বিপদ, আবার শাড়ি পড়ে দ্রুত হাঁটাও কঠিন।

* চুলের তেল, ছাতা, সানগ্লাস, দু জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল, কাপড় ধোবার সাবান, দড়ি, কাঁচি, ছুরি, প্লেট, গ্লাস, গামছা (টাওয়াল অনেক ভারী হয়) , মহিলারা হাঁটার উপযোগী কেডস/স্নিকারস, মোজা অবশ্যই নেবেন।

*ভেসলিন নিতে ভুলবেন না, মদীনায় আবহাওয়া অসম্ভব শুষ্ক, হাত পা এর চামড়া ফেটে যায়।

* ছোট্ট কৌটায় করে লবন, শুকনো মরিচের গুড়ো, আচার ইত্যাদি নেবেন। কারন মীনা, মুযদালিফা, আরাফাতে আরব দেশীয় মসলা হীন খাবার পাবেন, তা বাংগালী মুখে নাও রুচতে পারে।

* মীনার দিনগুলোর জন্য কিছু শুকনো খাবার রাখতে পারেন। যেমন চিড়া, বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি।

* প্রয়োজনীয় ওষুধ একটু বেশি করে নেবেন, সেই সাথে কফ সিরাপ, প্যারাসিটামল, জি ম্যাক্স, এন্টিহিস্টামিন, মাসল পেইনের মলম/ অষুধ নেবেন।

* মুযদালিফায় রাত্রি যাপনের জন্য ম্যাট ও চাদর।

*পকেট কুরআন শরীফ ও অনুবাদ দেশ থেকে নেয়া ভালো। ঐ দেশের কুরআনের ফন্ট আলাদা, পড়তে পারবেন না।

* কি কি জিনিস নেবেন তার লিস্ট এখন থেকেই লিখে ফেলুন, প্রতিদিন নতুন কিছু মনে হলে, লিস্টে যোগ করুন।

* অতিরিক্ত কাপড় নেবার দরকার নেই। সেখানে আদ্রতা খুবই কম, তাই কাপড় ধোয়ার এক ঘন্টার মাঝে শুকিয়ে যায়।

* কার জন্য কি আনবেন লিস্ট বানিয়ে ফেলুন, তাহলে অহেতুক দোকানে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট হবে না।

* শপিং এ বেশি সময় নষ্ট না করাই উত্তম। কারন শপিং সারা জীবন করা যাবে, কিন্তু হজ্জে বার বার যাবার সৌভাগ্য নাও হতে পারে!

*সৌদি গিয়ে প্রতিদিন অন্তত এক পারা কুরআন পড়ার চেষ্টা করুন। এভাবে পড়া আবশ্যকীয় নয়, তবে এইম থাকলে অনেক তিলাওয়াত করা হয়।

* হজ্জ এর পুরো সফরে বিভিন্ন যায়গায় ট্রাফিক জ্যামে বা লাইনে অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়টা বিরক্তি প্রকাশ না করে, কুরআন তিলাওয়াত করুন।

অযু সব সময় রাখার চেষ্টা করুন, সব যায়গায় অযুর পানি পাবেন না, তাই সাথে তায়াম্মুমের মাটি রাখুন।

* মহিলা ও পুরুষ উভয়েই চেইন যুক্ত, একাধিক পকেট ওয়ালা পাজামা তৈরি করে নিন।

* সুই, সুতা, বোতাম, কলম, কাগজ, স্মার্ট ফোন নিন।

*সম্ভব হলে স্মার্ট ফোনে কম্পাস ও গুগল ম্যাপের ব্যাবহার শিখে নিন। হারিয়ে গেলে কাজে লাগবে।

* সব সময় আইডি কার্ড ধরনের যা যা দেয়া হবে, গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন। তা না হলে হারিয়ে গেলে চরম বিপদে পড়বেন।

* ভাঁজ করে পকেটে রাখা যায় এমন ছোট্ট জায়নামাজ নিন।

* মোবাইল চার্জার দুটো, একটা পাওয়ার ব্যাংক নিন।

*মোস্ট ইম্পরট্যান্ট: সহিহ দুয়ার বই নিন (হিসনুল মুসলিম, সিয়ান পাবলিকেশনের ‘ওয়া ইয়্যা’কানাস্তাঈন’ দুটো সহীহ দুয়ার বই এর নাম) ও নিজ হাতে লিখে একটি দুয়ার লিস্ট নিন। হজ্জের সময় আল্লাহ্‌ এর কাছে কি কি চাইবেন, তা লিস্টে লিখুন।

* বেশি মালপত্র নেবেন না, মক্কায় স্পঞ্জের চপ্পল থেকে শুরু করে প্রায় সবই পাওয়া যায়।

“হজ্জ ও মদীনার ইবাদাতের কিছু টিপস”

রৌদ্রময়ী এডমিন

জুলাই ১৯, ২০১৯ইং