★ ইস! গরুটা কিনে ঠকলাম। ওরা গরু কিনেছে আমাদের চাইতেও কম দামে। আর স্বাস্থ্য কত সুন্দর৷ অনেক মাংস হবে। ★ কোরবানী তো দিতাম না ভাই…. বাচ্চাগুলোর জন্য দিতে হল। সবাই মাংস খাবে আর ওরা তাকিয়ে দেখবে ব্যাপারটা কেমন দেখায়?? না হলে হাতের যে অবস্থা! ★ দাম হিসেবে গরু কিনে জিততে পার নি হে! দু চার হাট দেখে কিনবে না? ★ ইস! ওরা কত বড় একটা গরু কিনেছে৷ আমার গরুটা কত ছোট ওদের তুলনায়। দামও কত কম….(মনে মনে লজ্জিত হয়ে।) ★এ শহরের সেরা গরুটাই কিনেছি। এবার ছবি তুলে ফেসবুকে দিই….. এ কি! লাইকের যে বন্যা বয়ে যাচ্ছে!! সবাই আবার দামও জানতে চাচ্ছে! হা হা! ★ কোরবানী টোরবানী দিতে পারব না। বন্যার্তদের এত টাকা সাহায্য করলাম, ত্রাণ বিতরণ করলাম…. আবার কোরবানী! আরে মিয়া, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চাইতে বড় কোরবানী আর কি আছে? পশু জবাই না করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান। উপরের কথাগুলো কি পরিচিত লাগছে? আমাদের সমাজে এই কথাগুলো অহরহই শোনা যায়। একশ্রেণীর পয়সাওয়ালা লোকের কাছে কোরবানী দেয়া যেন মান সম্মানের ব্যাপার। সবচাইতে দামী আর বড় গরু না দিতে পারলে সমাজে ইজ্জত বলে কিছু থাকেনা৷ আবার আরেক শ্রেণীর লোক কোরবানী দিতে মোটেও ইচ্ছুক নয়। তারা শুধু মাত্র মাংস খাওয়াটাকেই মূখ্য মনে করে। কোরবানীর উদ্দেশ্যই হল শুধু কব্জি ডুবিয়ে মাংস খাওয়া। আবার আরেক শ্রেণী অন্যের পশু দেখে রায় দিয়ে বেড়ায়। ঠকল নাকি জিতল!! আরেক দল আছেন যারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনে। কিন্তু আশে পাশের মানুষদের পশু কেনা দেখে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে! অথচ, আল্লাহ্ কাউকেই তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব দেননি৷ সাধ্যের মধ্যে সেরাটা করাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যথেষ্ট। আরেকশ্রেণী তো পারলে দেশের সেরা পশুটা কিনে রীতিমত মালা পড়িয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন! লোকে দেখুক, জানুক, বাহবা দিক!! এবার বলি বিশেষ শ্রেণীর কথা, এনারা ধর্মকে নিজেদের মনমত চালাতে চান। তারা আবার বড়ই মানবদরদী। মানবতার সেবায় জান-প্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেও কোরবানী তাদের কাছে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় বিষয়। এসব না করলেও চলে! ধরা যাক, এক লোকের দুই মেয়ে৷ একজনকে বিয়ে দিল। গহনা গাটি দিয়ে, পৈতৃক সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিল। অন্য মেয়েকে কিছুই দিল না। এই লোকের যুক্তি—, “দিইনি, তা তো নয়৷ দিয়েছি তো৷ একজনকে দিয়েছি৷ দুজনকেই দিতে হবে এমন কথা আছে নাকি?” এই মানুষটার ব্যাপারে আপনাদের কি মত? তাকে কি জালেম বলবেন নাকি হৃদয়বান বলবেন? যখন কাউকে আল্লাহ্ সম্পত্তি দান করেন তখন তার সম্পত্তিতে গরীব-দুঃখীর হক্ব থাকে৷ সে বিপদে-আপদে, দুর্যোগের সময় অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে। এটা স্বাভাবিক নিয়ম। আর কোরবানী হল আল্লাহর হুকুম। প্রত্যেক সামর্থ্যবানের জন্য তা ওয়াজিব। এটা আল্লাহর হক্ব। অসহায় মানুষকে সাহায্য করবেন বলে আল্লাহর হক্ব আদায় করবেন না এটা তো হতে পারেনা৷ এই অযুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। সামর্থ্য থাকার পরেও কোরবানী না দিলে গোনাহগার হবে আর যদি কোরবানী কেই অস্বীকার করে বসে, অপ্রয়োজনীয় কাজ ভেবে বসে তবে সে ব্যক্তি ঈমানহারা হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ। এবার অন্যদের প্রসঙ্গে আসি৷ পশু কিনছি আমরা সবাই৷ জবেহও করা হচ্ছে৷ কিন্তু শুধুমাত্র নিয়্যত পরিশুদ্ধ না থাকার ফলে আমাদের কোরবানী আল্লাহর দরবার পর্যন্ত উঠছেই না৷ কি ভয়ংকর আফসোসের কথা! কোরবানীর উদ্দেশ্যই হল প্রবৃত্তি কে জবেহ করে আল্লাহর সামনে নিজেদের একনিষ্ঠ আনুগত্য সমর্পণ করা৷ কতই না সহজ করেছেন আল্লাহ্ আমাদের জন্য৷ অথচ, ইবরাহীম (আঃ) এর জন্য একটি নির্মম পরীক্ষা ছিল৷ তিনি তাঁর কঠিন পরীক্ষায় কত সহজেই না উত্তীর্ণ হয়েছেন ঈমান আর তাক্বওয়ার কারণে৷ আর আমরা আমাদের সহজ পরীক্ষায় শুধু মাত্র নিয়্যতের কারণে ফেইল করছি৷ আজে বাজে বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। গরুর দামের সাথে মাংসের পরিমাণ মিলিয়ে দেখি, ঠকলাম নাকি জিতলাম সেই হিসাব মেলাতে বসি৷ আফসোস! আফসোস!! অবশ্যই কুরবানী আল্লাহর জন্য। সেই মাংসে সমাজের দুঃস্থ, অসহায়দের হক্ব আছে৷ আত্নীয়-স্বজন আর পড়শির হক্ব আছে। আসুন, আল্লাহর জন্য কোরবানী করি, যার যার হক্ব নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বুঝিয়ে দিই। আল্লাহ্ আমাদের তাওফীক দান করুন, কবুল করুন। মাংস খেতে নিষেধ তো নেই। সবার হক্ব আদায় করার পরে মাংস খেয়ে যে তৃপ্তি তার কি তুলনা হতে পারে?
সত্যের আহবান
জাকিয়া সিদ্দিকী
অগাস্ট ৮, ২০১৯ইং