রৌদ্রময়ীর জন্য লেখার কথা যখন বলা হলো, ভেবে পাচ্ছিলাম না কী লিখবো। অথবা এমন কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম যা সবার জন্য হবে।
গল্পটা আমাকে দিয়ে হয় না ঠিকঠাক। কিছু সত্যি গল্প বলার চেষ্টা করি।
অনেক বছর আগের কথা, প্রায় ৮-৯ বছর আগের, একটা বাচ্চা মেয়েকে চিনতাম। এখনো চিনি। তবে বাচ্চা মেয়েটা এখন অনেক বড়। সেই ছোট্টোবেলা থেকে বাইতুল্লাহকে সে খুব ভালোবাসে। এই ভালোবাসা অন্য অনেক বাচ্চার ভালোবাসা থেকে অন্যরকম। বাবার আর্থিক অবস্থা ওকে বাইতুল্লাহ দেখাতে নিয়ে যাওয়ার মতো ভালো না। কিন্তু সে তো দেখতে যাবে বাইতুল্লাহ। যেতেই হবে। ওমরা করতে হলেও জনপ্রতি দেড়-দু’লাখ টাকা দরকার। কী করা যায়!
সে একটা ব্যাংক বানালো। যত টাকা সে পায়, ওখানে জমায়।
ঈদে খুব দামী জামা তাকে কিনে দেওয়া যাবে না।
‘ব্যাংকে দিয়ে দাও আমার বাকী টাকা।’
ঈদের সালামিতে আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ। সমস্ত সালামি জমা হয় ঐ ব্যাংকে। ভালোবাসার ছোট্টো ব্যাংকে।
এরকম চলতে থাকলো। উৎসাহ দেওয়ার তেমন কেউ নাই। এই একশো দুইশো টাকা জমিয়ে কি আর লাখ টাকা হয়!
না হলো।
সেই বাচ্চা এখনকার কিশোরী মেয়েটা পুরো পরিবারসহ গত বছর হজ্জ করে এসেছে।
আমি শুনে হতবাক! বলো কী! কীভাবে হলো?
এই ‘কীভাবে হলো’র উত্তর আমি খুঁজতে যাইনি। ও তো আল্লাহর মেহমান হতে চেয়েছিলো, যিনি সমস্ত মেজবানের চেয়ে বড় মেজবান, অভাবহীন, সীমাহীন মেজবান। অসম্ভব না।
আমার মায়ের গল্পটা বলি। এটাও অনেক বছর আগের কথা। উপরের গল্পটা যত আগের, তার চেয়েও অনেক আগের কথা। কয়েক যুগ আগের। আমার নানা আদর করে একবার তাঁর মেয়ের জন্য দুয়া করতে চাইলেন। মেয়ে বললো, আমি যেন হজ্জ করতে যেতে পারি।
বাবা দুয়া করলেন, হে আল্লাহ, আমার মেয়ে যেন হজ্জে যেতে পারে।
তার ক’বছর পর আমার নানা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তারও অনেক বছর পর মা হজ্জ করেন। “শেষ বয়সে” ধর্মকর্ম করার বয়সে না, বেশ অল্প বয়সে।
এ তো গেলো ঘরের গল্প। ২০১৭ এর আল হাসান আব্দুল্লাহর গল্পটা মনে আছে না?
ঘানা’র এক গ্রামের বাসিন্দা। ছোট্টো একটা ড্রোন দেখে তার্কিশ এক পরিচালককে তিনি জিজ্ঞেস করেন এর চেয়ে বড় কিছু কি আছে যেটা তাঁকে হজ্জে নিয়ে যাবে!
আল হাসান আব্দুল্লাহকে এরপর খুঁজে বের করে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জে যান তিনি।
আব্দুল্লাহ থাকতেন ঘানায়, ব্যবস্থা হয়েছিলো তুরস্ক থেকে।
আরো অনেক দূর থেকেই হতে পারতো। অথবা আব্দুল্লাহর পাশের গ্রাম থেকেও হতে পারতো। আপনি কখনোই জানেন না আপনার দোয়া কখন কবুল হবে। কীভাবে কবুল হবে। কাকে দিয়ে আল্লাহ আপনার কাজ করিয়ে নেবেন।
আপনি শুধু জানেন আপনার হৃদয়ের খবর, আর আল্লাহ জানেন।
আপনার নিয়ত থাকুক। ঢের বিশাল নিয়ত। নিয়তের সাথে আপনার চেষ্টার আর্থিক পরিমানের কোনো তুলনা না হোক। এক টাকা যদি জমান, সেটাকেই অমূল্য মনে হোক। করুণাময় আপনার আকাঙ্ক্ষা দেখবেন, অর্থের পরিমাণ না। সে ব্যবস্থা তো উনিই করতে পারেন।
আর আপনি?
আপনি শুধু পারেন ভালোবাসায় ভরা এক অন্তর নিয়ে আশাবাদী হয়ে থাকতে।
দোয়া করে যেতে থাকেন। দেখুন না আল্লাহ কবে আপনাকে কবুল করেন তার ঘরের অতিথি হিসেবে। বছরের পর বছর লেগে যাক, যেদিন আপনি চাক্ষুষ করবেন দোয়া কবুল হয়েছে, সব ভুলে যাবেন, সব।
আল্লাহর কাছে চাইতে থাকুন, মাঝরাত্তিরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ুক বাইতুল্লাহর প্রবল বাসনায়, আপনার মালিক তো ফিরিয়ে দেওয়ার মালিক নন, অফুরান দেওয়ার মালিক।
وَلَمْ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيًّا
হে আমার পালনকর্তা, তোমাকে ডেকে আমি তো কখনো ব্যর্থ হইনি।
(সূরা মারইয়াম, আয়াত ৪)
মধ্যরাতের অশ্রু
নাবিলা আফরোজ জান্নাত
অগাস্ট ০৯, ২০১৯ইং