ছোট থেকেই জন্মদিনের দিন, কোন এক অজানা কারনে আমার বেশ মন খারাপ থাকতো!
এখনো মনে আছে কোন এক বছরে এই বিশেষ দিনটিতে, বালিকা আমি উদাস চোখে জানালার গরাদের এপাশ থেকে দূরের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম……… ছোট্ট মেয়েটির দু চোখ জুড়ে কিসের এত উদাসীনতা ছিল… জানি না।
কেউ যখন গিফট দিতো বা উইশ করতো, তখন অবশ্যই ভালো লাগতো, গিফট পেতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু শত কিছুর পরও নামহীন এক বিষন্নতা হৃদয়ের গহীনেপ্রায়ই প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করে রাখতো।
কিছুটা বড় হবার পর, সেই বিষন্নতা যেন ধীরে ধীরে সংজ্ঞায়িত হলো। জন্মদিনের দিন তখন বার বার মনে হতো, জীবন থেকে আরো একটি বছর চলে গেল। অনেক আনন্দ আর সেলিব্রেশনের মাঝেও এই কথাটি মনে হলেই, বুকের ভেতরটায় কেমন হাহাকার করে উঠত।
সেসময়েও জানতাম না যে, ইসলামে জন্ম দিন পালনে কোন বিশেষত্ব নেই। উল্টো পেগান দের/ প্রকৃতি পূজারীদের অনুকরণ করা হয় দেখে, জন্ম দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধু ফিতরাত থেকেই নিশ্চয় এ দিনটি আসলে অজানা কষ্টে মন ছেয়ে যেতো।
যাই হোক, ইতিহাসের দিকে যেতে ইচ্ছে করছে না। বরং জন্ম দিনের বিশেষত্বের ভিন্ন এক রূপের কথা বলবো আজ।
জন্ম দিন আসলে কি জানেন? এর অর্থ হলোঃ-
– আয়ু থেকে আরো এক বছর কমে গেল।
– দুনিয়াতে ভালো কাজ করার বা কোন কিছু এচিভ করার সুযোগ আরো কমে গেল।
– সর্বোপরি, আপনি মৃত্যুর দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
জন্ম দিন পালন করার আগে, একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখুন তো আসলেই কি আপনি বিগত বছরে এমন কিছু করেছেন, যে কারনে আপনি নিজেকে খুব সফল মনে করতে পারেন? বেশির ভাগের উত্তরই হবে,- “না”।
আগামী বছর কি খুব বিশাল কিছু অর্জন করার ব্যাপারে, আপনি নিশ্চিত? এবারও সবাই না বোধক উত্তর দেবেন।
কারন আগামী বছর আপনি বেঁচে থাকবেন কি না, তারই কোন নিশ্চয়তা নেই! নাম কামিয়ে দুনিয়া উল্টে ফেলা তো, অনেক পরের কথা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু ছাড়া আর কোন বিষয়ই কারো জীবনেই গ্যারান্টিড না। আর বছর ঘুরে এক একটি জন্ম দিন আসা হল, সেই মৃত্যু দিনের দিকেই ধাবিত হবার অপর নাম।
তাই একজন মুসলিমের উচিৎ জন্ম দিন নয় বরং তার মৃত্যুর দিনটি যেনো সুখের হয়, আনন্দের হয়, সেই চেষ্টা করা। আল্লাহ্ যেন আমাদের তৌফিক দেন, জীবনকে অর্থ বহ করার। আমিন।
শুভ জন্মদিন
হাসনীন চৌধুরী
( ২ মার্চ ২০১৮)