দুনিয়ার জীবন

জীবনের একটা সময় নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে। সে সময় বিয়ে করতে না পারার যন্ত্রণায় ছেলেমেয়েরা মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ায়। কী যে কষ্ট, কত যে কষ্ট, কেউ বোঝে না। একটা সময় বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিয়ে হয়। কয়দিন পরে বোঝা যায়, বিয়ের সাথেও আরও কত দুঃখ-জ্বালা-সমস্যা টেনে আনা হল।

মেয়েটার ভয় হয় স্বামীকে হারানোর, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটে তার। স্বামীর বিরক্ত লাগে স্ত্রীর একটানা বাচালের মত অর্থহীন কথা, অতি ভালোবাসায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে থাকতে মনটা যেন একটুখানি নিজস্ব সময়ের জন্য আনচান করে ওঠে। বিয়ে না হলে এই সমস্যাগুলো তৈরিই হত না।

দুনিয়ার জীবনে বাচ্চা না হলে মানুষ হাহাকার করে। আবার বাচ্চা হলেও দিনরাত দুশ্চিন্তা, বাচ্চাকে বড় করার, ঠিকভাবে মানুষ করার। বাচ্চার রোগ-বালাই হয়, অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে বাবা-মায়ের মন ভার হয়ে থাকে। বাচ্চার বিয়েশাদি হয় না, বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। বাচ্চা বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তখন সারাজীবন সন্তানের জন্য খেটে মরা বাবা-মাদের কেমন লাগে? বাচ্চা না থাকলে কিন্তু এসব কষ্ট জীবনে থাকতই না।

মানুষের জীবনের কোনো আনন্দই পরিপূর্ণ না, সেখানে একটুখানি কষ্ট, যন্ত্রণা বা ভয়ের মিশেল থাকবেই। জান্নাতের আনন্দ নিঁখুত, নিখাদ। অতি যত্ন নিয়ে সে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই। আনন্দের মধ্যে হালকা পাতলা ব্যথাও লুকিয়ে নেই। সেখানকার সুখ পরিপূর্ণ সুখ। অন্তর ভরে দেওয়া সুখ। সেই সুখ কখনও কমে না, খালি বাড়তেই থাকে। বাড়তেই থাকে।

আমরা যতই বোকা হই, বা ইসলামি জ্ঞানের দিক থেকে মূর্খ হই না কেন, জান্নাতের সুখের কথা সবাই টের পাই। তাই ছেলে-বুড়ো সবাই জান্নাতে যেতে একপায়ে খাড়া। কিন্তু আমাদের সমস্যা আমরা জান্নাতের জন্য কিছুই ছাড়তে রাজি না। পরীক্ষা আমাদের চিরজনমের শত্রু, অথচ পরীক্ষা পাশের পুরস্কার পেতে আগ্রহের কমতি নেই। কীভাবে পুরস্কার পাব যদি পরীক্ষাই না দিই? কীভাবে জান্নাতে যাব, যদি দুনিয়াতেই হার মেনে নিই?

আল্লাহ বলেছেন, ঈমান এনেছি বলার পর মানুষকে পরীক্ষা নেওয়া হবেই হবে। তা নাহলে কীভাবে জানা যাবে ঈমান সে সত্যিই এনেছে কিনা! আল্লাহ মানুষের পরীক্ষা নেবেন ক্ষুধার কষ্ট, ভয়, ধন-সম্পদের ক্ষতির দ্বারা। মানুষের পরীক্ষা হবে দুঃখ দিয়ে, যন্ত্রণা দিয়ে, বুকের মাঝের ধুকপুকানি উদ্বেগ দিয়ে।

সে-ই ধৈর্য ধরতে পারবে যে জানে, এসবের বিনিময়ে তো জান্নাত! চিরসুখের জান্নাত! যেখানের এক হাত জমিনের সুখগুলোই এই পৃথিবীর সমস্ত সুখের চেয়ে ঢের বেশি। যদি সত্যিই জান্নাতে বিশ্বাস করে থাকি, যদি সত্যিই আল্লাহর কথায় ঈমান এনে থাকি, তাহলে দুঃখকে আর ভয় কীসের?

মৃত্যুর পরেই তো দুঃখ শেষ। ওপারের জীবনেই তো সুখ! আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মেহমানদারি করতে মহান রব তো জান্নাতকে সাজিয়েই রেখেছেন.. ভয় কীসের কষ্টকে? মাত্র কদিনেরই তো দুনিয়া, কদিনেরই তো কষ্ট।


দুনিয়ার জীবন
– আনিকা তুবা

(২০/০৩/২০১৯)