ঈর্ষা

ভদ্রমহিলা তার ভাই এর সংসারের সুখের কথা বলতে বলতে কেঁদে দিলেন। কান্নাটা আনন্দ অশ্রু নয় কোন ভাবেই, হতাশার, ক্ষোভের। তিনি নিজের সাথে তুলনা করে কষ্ট পাচ্ছিলেন। ধরা যাক তার নাম সালমা।

বাচ্চাটা যাই করে তাতেই মজা পাচ্ছিল অন্তরা। মুখে বারবার বলছিলও, বাহ বেশ কিউট তো বাবুটা। আকারে ইংগিতে বলার পরেও না বলায় স্পষ্ট ভাবেই সুমনা অনুরোধ করল মাশা আল্লাহ বলতে। তাও বলল না। খুব বেশী বলাতে বলল সে মনে মনে বলেছে।

ফাতিমার ট্যাবটা খুব মন দিয়ে দেখল অরণী। কত নিয়েছে জানতে চাইল। কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল এরপরে, একটু যেন মন খারাপও।

রাবেয়ার প্রতিটা কথায় তুলনা। ‘তোমার বাসায় দুইটা বুয়া? আমাকে সব কাজ নিজের করতে হয়।’ ‘ইশ তোমার মেয়ে কি সুন্দর নিজের হাতে খাচ্ছে। আমারটা খুব জ্বালায়।’ রাবেয়া আসলেই একারণে খুব সংকুচিত হয়ে পড়ে আসিয়া।

সালমা, অন্তরা, অরণী, রাবেয়ারা আমাদের আশেপাশেই থাকে। কখনো কখনো আমাদের ভিতরেও এরা বসবাস করে।

এদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বদনজর থেকে বাঁচার জন্যই আমাদের মালিক আমাদের সুরাহ নাস দিয়েছেন, সুরাহ ফালাক দিয়েছেন, আয়াতুল কুরসি দিয়েছেন।

আর আমাদের অন্তরে যখন এদের ছায়া পরবে তখন একটা কথা খুব ভালো ভাবে মনে করা উচিত। প্রতিটা মানুষ নিজের রিজিক নিয়ে এসেছে। আমার কদরে যে রিজিক আছে, সেটা কেউ ঠেকাতে পারবেনা। অন্যের ভালো দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আর আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কারো কিছু দেখে মুগ্ধ হলে তার বারাকাহর দুয়া করতে বলেছেন।

আমাদের উচিত অন্যের জন্য বেশী বেশী দুয়া করা। তবে ফিরিশতারাও আমাদের জন্য অনুরূপ দুয়া করবেন।

আর দূর থেকে যার সুখ দেখে ঈর্ষান্বিত হচ্ছি, তার কঠিন পরীক্ষাগুলো দেখেও কিন্তু আতংকিত হতাম আরো বেশী। আমাদের মালিক ন্যায় বিচারক, তিনি জানেন কার জন্য কোনটা দরকার। তাঁর উপরেই পুর্ণ আস্থা রাখি, তাঁর কাছেই নিজেদের প্রয়োজন জানাই চলুন। অন্যের সাথে তুলনা করে কষ্ট পাওয়া চরম বোকামি।

…………….

পরিশিষ্ট:

আবূ উমামা ইবনু সহল (র) বর্ণনা করেছেন,

‘আমির ইব্নু রবী‘আ সহল ইব্নু হানীফকে গোসল করতে দেখে বললেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। (‘আমিরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়ল।

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি সহল ইব্নু হুনাইপ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি ? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করতে পারছে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে করছ যে, তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে ?

লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইব্নু রবী‘আ (বদনজর দিয়েছে)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমির ইব্নু রবী‘আকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি بارك الله কেন বললে না ? এইবার তুমি তার জন্য গোসল কর।

অতএব ‘আমির হাত মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সকলের সাথে রওয়ানা হল। (সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩৫০৯, আহমাদ ১৬০২৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [মিশকাত- ৪৫৬২])

ঈর্ষা
নূরুন আলা নূর
(১৬ মার্চ ২০১৮)