অনেকেই মাঝেমধ্যে বলে, ‘বই পড়ার আগ্রহ পাই না!’
তারা কিছু উপায় বাতলে দিতে বলে যেন বই পড়ার আগ্রহ তৈরী হয়। তাই সবার উদ্দেশ্যে অল্পস্বল্প কিছু লিখলাম, আল্লাহ্ চান তো কারোর উপকার হতে পারে।
বই পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কিছু কাজ করতে পারেন। যেমন-
(১) প্রথমত ফেইসবুক আইডিটা ডিএক্টিভেট করুন ততোদিনের জন্য, একটা বই পড়ে কমপ্লিট করতে আপনার যতোদিন লাগে। কেননা একসময়কার বইপোকা আমরা যারা এখন ফেইসবুক ইউজ করি তাদের মধ্যে অনেকেরই এখন ফেইসবুকের নেশার কারণে বই পড়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে! ফেইসবুকের প্রতি আমাদের প্রচণ্ড নেশা! ‘Facebook’ আর ‘Book’ এই দুই Book একসাথে কান্টিনিউ করতে গেলে মনযোগবিচ্যুতি ঘটেই, আগ্রহ হারায় ই! তাই যেকোনো এক Book ওপেন রাখতে হবে আরেকটা বন্ধ রাখতে হবে!
(২) বুক রিভিউ, বুক সেলার পেইজগুলোকে See First করে রাখতে পারেন, বইয়ের গ্রুপগুলোয় ডেইলি ঢু মারতে পারেন, এতে ডেইলি নিত্যনতুন বইয়ের সন্ধান পাবেন এবং মাঝেমধ্যে খুব সুন্দর বুক রিভিউ পাবেন যেটা দেখে কিনা বই পড়ার আগ্রহ অটোম্যাটিক্যালি বেড়ে যাবে এবং বই পড়া তখন একটা নেশায়ও পরিণত হবে ইনশা’আল্লাহ!
(৩) এখন যারা খুব ভালো বই পড়ে এবং আগে যারা অনেক বই পড়েছে তাদের সাথে বেশি যোগাযোগ রাখুন, তাদের সাথে মিশুন, তাদের কাছে বিভিন্ন বইয়ের গল্প শুনুন, তাদের কাছ থেকে সাজেশন নিন কোন বিষয়ে কোন বইটা ভালো! (কোনো ফেমিনিস্ট, মডারেট মুসলিমের কাছ থেকে বইয়ের ব্যাপারে সাজেশন না নেয়াই উত্তম।) তারপর সেই বই সম্পর্কে নিজেও নেট ঘেটে একটু খোঁজখবর নিন আদৌ সেই বই ভালো বই কিনা! এতে দেখা যায় বই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বই পড়ার আগ্রহটা বেড়ে যায়, আলহামদুলিল্লাহ্!
(৪) আপনার প্রয়োজন এবং তারপর পছন্দ অনুযায়ী বই সিলেক্ট করুন। বুকলিস্ট করুন তারপর ধীরেধীরে একটা শেষ করে আরেকটার দিকে এগোন। আর বিরামহীনভাবে একের পর এক বই না পড়াই ভালো আমার মতে। কেননা মাঝেমধ্যে একটার পর একটা পড়তে গিয়ে বিরক্তিভাব চলে আসে আর অনেকেই তখন পড়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলে। আর একটা বই পড়ার পর সেটার বিষয়বস্তু কিছুদিন মাথায় ঘুরপাক খায় তাই একটা বই পড়ে অন্তত ২/৩ দিন নতুন কোনো বই পড়া অফ রাখুন এবং সেটা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করুন, প্রশ্ন বের করুন, নোট করুন, ব্রেইন জ্যামমুক্ত করুন, তারপর আরেকটা পড়ুন।
(৫) যারা নতুন পড়ুয়া তারা অবশ্যই সহজবোধ্য এবং পড়ে বিরক্তি আসে না বরং আনন্দ পাওয়া যায় এমন বইগুলো পড়তে পারেন, ইসলামিক গল্প, উপনাস্যের বইগুলো সিলেক্ট করতে পারেন। এরপর পড়ার অভ্যাস হয়ে গেলে ধীরেধীরে তখন হাইয়ার লেভেলের বইয়ের দিকে এগোবেন। প্রথম দিকেই কেউ কঠিন, রসকষহীন বই পড়লে তার আর বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হয় না!
(৬) যারা “ফোন এডিক্টেড” তারা কষ্ট করে ফোনটাকে দূরে রাখুন এবং তারপর পড়তে বসুন নাহলে দুইলাইন পড়ামাত্রই কোনো জরুরী কাজের বাহানায় ফোন ধরে বসবেন তখন বই পড়ার আগ্রহ জানালা দিয়ে পালাবে।
(৭) যখনই পড়তে বসবেন তখনই পড়া শুরু করার পূর্বে ইস্তিয়াজা (আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজিম), বাসমালা (বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম), হামদ (আল্লাহর প্রশংসা) পাঠ করে নিবেন।
(৮) আশেপাশে ইসলামিক বুকশপ বা লাইব্রেরী থাকলে যাতায়াত বাড়ান। তবে নন মাহরামে পরিপূর্ণ হলে সেখানে মহিলাদের না যাওয়াটাই উত্তম। মহিলাদের উদ্যোগে গড়ে উঠা কিংবা মহিলাদের পড়ার জন্য পর্দার ব্যবস্থা আছে এবং মহিলাদের যাতায়াত আছে সেরকম লাইব্রেরী হলে মহিলারা যেতে পারেন, অন্যথায় ঘরেই থাকুন।
(৯) সামর্থ্য থাকলে বেশিবেশি বই কিনুন আর যেসব পড়ুয়া দ্বীনি ভাইবোনেরা নতুন বই আসামাত্রই সেটা পড়ে নলেজ বাড়ানোর চিন্তায় থাকে তাদের সাথে কম্পিটিশান করুন। ভালো কাজে সবসময় নিজের চেয়ে এগিয়ে থাকা লোকদের অনুসরণ করবেন, তাদের সাথে কম্পিটিশান করবেন। এতে যেকোনো কাজের আগ্রহ বাড়বে ইনশা’আল্লাহ্।
(১০) যাদের পক্ষে বই কেনা সম্ভব না তারা যেসব দ্বীনি ভাইবোনদের বাসায় বুকশেলফ সুন্দরসুন্দর বইয়ে ঠাসা তাদের বাসায় যাতায়াত করুন। তাদের প্রব্লেম না থাকলে তাদের কাছ থেকে ধার করে এনে পড়ুন, ফেরত দিন আবার আনুন, পড়ুন। এবং অবশ্যই অন্যের বই আনলে যত্নসহকারে রাখবেন, এটা আপনার কাছে আমানাহ!
(১১) আপনি যে রুমে থাকেন সেই রুমেই বই রাখুন। আপনার রুমে বুকশেলফে, বিছানার পাশে, টেবিলের ওপরে, ওয়ারড্রবের ওপরে – এসব জায়গাগুলোয় কয়েকটা করে বই রাখুন যেন চলেফিরতে সারাদিন ই বই আপনার চোখে পড়ে। আর বই চোখের সামনে থাকলে তখন একটু হলেও হাতে নিতে ইচ্ছা হয়, পড়তে ইচ্ছা হয়। বই চোখের আড়ালে রাখার কারণে দেখতে না পেয়ে ব্যস্ততার কারণে মাঝেমধ্যে বইয়ের কথা আমরা ভুলেও যাই। আর যখন বই চোখের সামনে থাকবে, তখন যতোই ব্যস্ততা থাকুক দিনে কোনো না কোনো একসময় বই দেখতে পেলে পড়তে আগ্রহ হবে ইনশা’আল্লাহ্।
(১২) একটা রুটিন বানিয়ে নিন আর তাতে বই পড়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় সেট করে রাখুন যেন প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও বই পড়া হয়।
ডেইলি বই পড়ুন, বেশি না পারলেও অন্তত ২ পৃষ্টা করে পড়ুন। পড়ার অভ্যাসটা চালু রাখুন কারণ না পড়তে পড়তে একসময় গিয়ে বইয়ের সাথে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় আর তখন এমন অবস্থা হয় যে আমাদের বই পড়ার আগ্রহটাই হারিয়ে যায়। আর এভাবেই পরবর্তীতে গিয়ে বই পড়া আমাদের জন্য খুব কষ্টকর কিংবা বিরক্তিকর একটা কাজে পরিণত হয়ে যায়।
(১৩) আর, মোস্ট ইম্পরট্যান্ট কথা হচ্ছে বেশিবেশি দুয়া করতে থাকুন যেন আল্লাহ্ আপনার বই পড়ার আগ্রহ তৈরী করে দেন। দুয়ার চেয়ে উত্তম সলিউশান আর কিছুই হতে পারে না।
[বিঃদ্রঃ বই পড়ার অভ্যাস করার আগে সুন্দর করে বই ধরতে এবং পৃষ্ঠা উল্টাতে শেখা প্রয়োজন।]
বই পড়া
-মেহজাবীন বিনতে আহমেদ
(১৫/০২/২০১৯)