ঘটনা-১ঃ- কাপল কাউন্সেলিং থেকে ঘটনাটা নিচ্ছি। হাসব্যান্ড, ওয়াইফ দুজনের সাথে আলাদা কথা বললাম। কাপল কাউন্সেলিং এ এটা জরুরী। এক পক্ষ শুনে পুরো সিনারিও বোঝা যায় না।
আমার বলার বিষয় হচ্ছে দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সংসার, সম্পর্ক, জীবন সব শেষ করে দিতে পারে। মানুষ হয়ে বাড়াবাড়ি, ঔদ্ধত্য আচরণ করছি এটা কি আল্লাহর পছন্দের কাজ?
একটা বাচ্চাকে অসহায় করে হাসব্যন্ড কে ডিভোর্স এর বিষয়ে বারবার ইনসিস্ট করার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে জোর করে স্বামীকে দ্বীন মানানোর চেষ্টা।
এটা একরকম সামাজিক, মানসিক রোগে পরিনত হয়েছে, আমি যেমন চাই আমার বরকে ওরকম ভাবতে হবে করতে হবে, আবার বউকে ও তাই।
হেদায়েত তো গাছ থেকে পেড়ে খাওয়ার জিনিস নয় যে জোর করে গাছে চড়িয়ে দিলাম আর পেড়ে খেল।
অন্য একটা, দুটো সমস্যার সাথে এটাই প্রকট ছিল যে, হাজব্যন্ড কে জোর করে প্রাকটিসিং করার চেষ্টা। ডিভোর্স এর দিকে পা বাড়ানোও সেই ভেবে।
ঘটনা-২ঃ- এক দ্বীনি ভাই আত্মহত্যা করেছে। যে গন্তব্যে উনি চলে গেছেন সেটা নিয়ে জীবন মৃত্যুর পোষ্ট মর্টেম না করি। মানসিক দ্বন্দ্ব, গিলটি ফিলিংস ভয়ানক কুরে কুরে খাচ্ছিল লোকটাকে। অনেকেই অনেক মানসিক সমস্যা কে ব্ল্যাক ম্যাজিক মনে করেন। কারণ ব্ল্যাক ম্যাজিকেও মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
মানসিক ভাবে হতাশ, অসুস্থ, হাল ছেড়ে দেওয়া একটা মানুষ আত্মহত্যা করতে চায়, করেছে এটা অস্বাভাবিক নয়।
আবার দ্বীন নিয়ে নিজের অনেক বেশি ভাল আমল আশা করা, সেমতে সবসময় কাজ করতে না পারা সে থেকে পরকালে ক্ষমা পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হওয়া, তীব্র গিলটি ফিলিংস এসব থাকতে পারে। ফ্যাক্টস বলছি। মৃতকে জানিনা তাই আগ বাড়িয়ে অন্য মন্তব্য করছি না।
এই ঘটনা আমার মায়ের সাথেও হতে পারত সে বিবেচনায় বলা।
গত প্রায় তিন সপ্তাহ আগেও আমাকে প্রতি মুহুর্ত আম্মাকে পাহারায় রাখতে হয়েছে। খালি তার মরে যেতে ইচ্ছা হত। জীবন নিয়ে ভাল কোন চিন্তা তার মধ্যে আসত না। নামাজ পড়ছে সব চলছে কিন্তু চিন্তা থেকে নিস্তার নেই। থামাতে পারছে না চিন্তা। আম্নার মধ্যে ও গিলটি ফিলিংস আসতে শুরু করল। এ আমি কি পাপ চিন্তা করি, এমন কেন হচ্ছে।
সব থেকে বড় কথা সে সপ্তাহখানেক একা একা কষ্ট পেয়েছে কারো সাথে শেয়ার করেনি। ডাক্তার মানে সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে তার বোঝাপড়া ভাল যাচ্ছিল তাই তাকে গড়গড় করে সব বলে দিয়েছে। ডাক্তারের চেম্বারে যখন প্রথম শুনলাম আমার আম্মার সুইসাইড করতে ইচ্ছা করে আমি চিন্তা করে পাচ্ছিলাম না আমার কি ভাবা উচিৎ আর করা উচিৎ।
আম্মার অবস্থা দেখে আমার ও মনে হচ্ছিল বদনজর বা ব্ল্যাক ম্যাজিক কিছু হতে পারে। যেজন্য প্রতিদিন ছোট ছোট রুকিয়ার আয়াত আম্মাকে শোনাতাম। যখনই দেখতাম আম্নার অস্হিরতা বেড়ে গেছে সাথে সাথে সুরা ফাতিহা, দোয়া ইউনুস পড়তে মনে করিয়ে দিতাম। কারণ ব্ল্যাক ম্যাজিক সত্য। কিছুক্ষন পরপর মনে করিয়ে দিতাম আম্মা পড়তে থাক।
আলহামদুলিল্লাহ এক মাস টানা ওষুধের পর আম্মা অনেকটা ভাল। খারাপ চিন্তাগুলো আর আসছে না। ঘরের প্রতিটা মানুষ আম্মাকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছিল। যেকোন ধরনের রোগীর জন্য যেটা খুব দরকার। গিলটি ফিলিংস, আত্মঘাতী চিন্তাগুলো ছিল ওত পেতে থাকা দৈত্য। আর পরিবারের সকলে ছিল সজাগ পাহারাদার। একজন কেউ আম্মাকে বলে নি এত নামাজ রোজা করে এমন পাপ চিন্তা মাথায় আসে কি করে, আলহামদুলিল্লাহ কেউ ই বলে নি।
ঘটনা-৩ঃ- কিছুদিন আগে এক বোনের স্টাটাসে দেখলাম এক মেয়ে সম্পর্কে লিখেছে মেয়েটা দিন দিন মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কারণ তার হিজাব নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলে। মেয়েটা খুশি খুশি হিজাব করত এখন সে দ্বীন পালন করছে না, ফ্যাশনেবল হিজাব করছে, অন্যরা কত ভাল পর্দা করে এসব ভেবে কষ্ট পাচ্ছে। হতাশা, বিষন্নতায় পেয়ে বসেছে।
অথচ এই মেয়েটার কষ্ট পাওয়ার কোন কারনই নেই। হিজাব ওড়না যা দিয়েই মাথা ঢাকা হয় সেটা যেমন রংচঙে ই হোক না কেন চুল সম্পূর্ণ ঢেকে থাকলে মাথা মানে চুল ঢাকার সুবাদে পর্দার কিছু বিষয় পালন তো হচ্ছে।
এক্ষেত্রে মেয়েটিকে বলা যেত যে, আপু তোমার মাথার পর্দা হচ্ছে। মাশাআল্লাহ তুমি চুল ঢেকে বাইরে যেতে পারছ। কিন্ত আপু তোমার উচিৎ এটাকে আরো সুন্দরভাবে করা।
যাই হোক, ব্ল্যাক ম্যাজিক আর মানসিক কোন সমস্যা যেটাই হোক প্ররোচনা কারীরা চেনা অচেনা রুপে চারপাশে থাকে। গলায় ফাঁস লাগানো কিংবা ওষুধ মুখে তোলা যেকোন এটেম্পট আত্মঘাতী ব্যক্তি নিজেই নেয় তবে তাকে সে পর্যন্ত যেতে পথ করে দেয় নানা মনের নানা মত।
বেচারা মরে যেয়েও নিস্তার কোথায়? স্বভাব চরিত্র দ্বীন সবকিছুর পোষ্ট মর্টেম চলবে বেশ কিছুদিন।
এজ এ মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর আমার অবজারভেশন হচ্ছে, দ্বীনে প্রবেশ করে আমি সবসময় উসাইন বোল্ট থাকব এটাই অধিকাংশের প্রত্যাশা হয়ে দাড়ায়। আর শুধু নিজে উসাইন বোল্ট হলে হবে না পরিবারকে ও হতে হবে।
একবারও কারো মনে আসে না যে দ্বীন নিয়ে ফাস্ট দৌড়ানোর কোন উপায়ই নেই। দুনিয়াতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। হাতে পাশের লাড্ডু নিয়ে খাওয়ার জন্য পাঠানো হয়নি। কতবার কতভাবে ঈমান আমল নিয়ে হোচট খেতে হচ্ছে, হবে। কতভাবে ঈমান যাই যাই করবে। কত আমলে গোল্ডেন এ প্লাস থাকবে তো কোনটাতে টেনেটুনে পাশ।
হাটিহাটি পায়ে ঈমান নিয়ে কলেমা পড়তে পড়তে পরকালের সফর শুরু করছে একজন সাধারণ মানুষ আর কি চাই, এটাই কি লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়, মরার সময় ঈমান থাকতে হবে?
একটা খারাপ দুর্ভাগা মৃত্যুর আগে দশ, বিশবার ঈমানের লেভেল অন্য অনেক থেকে বাড়িয়ে নিয়েছিলাম, তাতে কি আসে যায়?
দ্বীন যতক্ষন মধ্যম পন্হায় অবলম্বন করা হয়, প্রতি নিঃশ্বাসে আল্লাহর দাসত্ব করা যায় ততক্ষণ সেভ জোন।
কোনদিন কেউ শুনেছে ফার্স্ট ক্লাস চাকর, টপার চাকর, সেরা দাস।
শুনে থাকলে এটা শোনা যায় অনুগত দাস, বিশ্বস্ত দাস।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের অনুগত, বিশ্বস্ত দাস হিসেবে কবুল করুন।
দ্বীন মানার পরেও ডিপ্রেশন!
কাজী দিশা
সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯ইং