শাইখ আহমাদ মুসা জিব্রীল হাফিজাহুল্লাহ তার উসূলুস সালাসার শারহে উল্লেখ করেছেন:
إن في الدنيا جنة من لم يدخلها لم يدخل جنة.
“দুনিয়ার জীবনেও একটি জান্নাত আছে। যে এই জান্নাতে প্রবেশ করেনি, সে পরকালীন জান্নাতেও প্রবেশ করবেনা।” [মাজমু’ ফাতাওয়া]
দুনিয়ার জীবনে জান্নাত খুজে পাওয়ার এই উক্তিটি যিনি করেছেন তিনি ইবনে তায়মিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ। যিনি তার ৬৫ বছরের জীবনে ৭ বার জেলে যান, এমনকি মৃত্যুবরণও করেন কারাবন্দি অবস্থায়, অথচ তিনিই নাকি দুনিয়ায় জান্নাত পাওয়ার কথা বলেন, হাস্যকর ঠেকেনা? আমাদের দৃষ্টিতে উনার জীবনই তো সবচে কষ্টের ছিলো।
আসলে এই জান্নাতের অর্থ হচ্ছে ‘ক্বলবুন সালীম’, একটি প্রশান্ত অন্তর। এই অন্তরের মর্ম কী?
এই অন্তর যারা পেয়েছেন, তারা অন্যদের মত দুনিয়ার জীবনে দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ, নির্যাতন সবকিছুই ভোগ করেন, বরং ক্ষেত্রবিশেষে অন্যদের চেয়েও বেশি। কিন্তু তারপরেও তা তাদের অন্তর থেকে ‘আল্লাহর উপর সন্তুষ্টি’ জিনিসটা কেড়ে নিতে পারেনা, সমস্ত কষ্টের মাঝেও তারা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার শক্তি রাখেন, তাদের শরীর, মন কষ্ট পেলেও তাদের মুখ এমন কিছু উচ্চারন করেনা যাতে আল্লাহ নাখোশ হন।
মিউজিক নয়, তারা কুরআন শ্রবণে কিংবা কুরআন তিলাওয়াতেই মনের স্বান্তনা খুজে পান, মনে হয় যেন আল্লাহই তাদের সাথে কথা বলছে।
তারা আমাদের মত সালাতে দাঁড়িয়ে শেষ করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন না, বরং সালাতই তাদের অন্তরের শীতলতা, তারা সালাতে দাঁড়িয়ে রব্বের সাথে বেশি সময় ধরে কথা বলতেই ভালোবাসেন।
তারা শেষরাত্তিরে লেপের তলায় সুখ খুজে পান না, রবের সমীপে জায়নামাজের জমিনে কপাল ঠেকিয়েই তারা সুখ খুজে পান।
সুখে দুঃখে, বিপদে আপদে, তেষ্টায় ক্লান্তিতে, চলতে ফিরতে কেবলমাত্র আল্লাহর স্মরণেই প্রশান্তি খুজে পান। যিকরকারী জবান তাদের, শোকরকারী অন্তর।
এই ‘জান্নাত’ ছুয়ে দেখা যায়না, অন্তর দিয়ে অনুভব করা যায় কেবল। এর ছিটেফোঁটাও যে বা যারা পেয়ে থাকেন, তারা কখনো সামান্য সমস্যাতেই অস্থির হয়ে বলতে পারেনা, “আমি ভালো নেই।” কঠিন সমস্যায় পতিত হয়েও বলে না, “আল্লাহ কেন আমাকেই সব বিপদে ফেলেন?”
তারা বিশ্বাস করে, দুনিয়ার জীবনে সামান্য কাটার আঘাতেও বান্দাহর গুনাহ মাফ হয়, যত বেশি কষ্ট তত বেশি গুনাহ মাফ, সবরের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তার মর্যাদার আসন তত বেশি ঊর্ধ্বে। আনন্দেও তারা বলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’, কষ্টেও বলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’, এই মানুষগুলো তাদের রবের উপর সর্বাবস্থায় সন্তুষ্ট। আশা করা যায় তারা তাদের রব্বের দিকেও সন্তোষভাজন হয়েই প্রত্যাবর্তন করবে…..
আল্লাহ আমার এবং আমাদেরকে দুনিয়াতে সেই জান্নাতের স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ দিন। ইবাদাতে ইখলাস অর্জন ও স্বাদ অনুভবের তাওফীক্ব দিন।
ক্বালবুন সালীম
– নিশাত তাম্মিম
(২১/০২/২০১৯)