ঈদের সুন্নাহ

ঈদের দিনের কিছু সুন্নাহ হলো:

১. গোসল করা ও সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাকে নিজেকে ভূষিত করা।

২. ঈদগাহে সালাত পড়তে যাওয়া, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। (নারীরা পূর্ণ পর্দা অনুসরণ করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।)

৩. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীরে তাশরীক বলতে বলতে যাওয়া।

৪. ঈদের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করা, যেমন- তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
(অর্থ: আল্লাহ আমাদের থেকে ও তোমাদের থেকে নেক আমলসমূহ কবুল করুন।)

৫. ঈদুল ফিতরে ঈদের সালাতে যাওয়ার আগে খাওয়া ও ঈদুল আযহার দিন সালাত থেকে ফিরে কিছু খাওয়া।

৬. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া ও পায়ে হেঁটে ফেরত আসা, সম্ভব হলে দুটি ভিন্ন পথ অবলম্বন করা।

৭. মানুষকে দ্বীন সম্পর্কিত উত্তম পরামর্শ দেয়া।

নিউজফিড ভেসে আসা ঈদের সুন্নাহ সম্পর্কিত পোস্টটা খুব মনযোগ দিয়ে পড়লো রিফাত। একটা একটা করে পড়ছে, আর মুখের মুচকি হাসিটা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু বাঁধ সাধলো শেষেরটা। দ্বীনি নসিহাহ তো এখন পর্যন্ত কাউকে দেয়নি, কী করা যায়?

অনেক ভেবেচিন্তে এইমাত্র পড়া পোস্টটাই শেয়ার করে দিলো। শেয়ার করার সময় দুটো আবেগী কথা জুড়তে ভুললো না।

মুহূর্তেই লাইক আর কমেন্টের নোটিফিকেশন আসা শুরু হয়ে গেল। কালকে পোস্ট করা গরুর ছবি আর ‘ঈদ মোবারক’ দেয়া পোস্টটার লাইক কমেন্টগুলো আর চেক করা হলো না। তার মধ্যেই আবার বন্ধুরা নক দেয়া শুরু হলো, “কিরে, কখন বের হবি?”

চ্যাট করতে করতেই চোখে ঘুম চলে এলো রিফাতের। শেষবারের মত আজকের পোস্টের লাইক সংখ্যাটা দেখে নিল। বাহ, ভালোই লাইক উঠেছে এটুকু সময়ে। পোস্টটা শেয়ার করে ভালোই করেছে একথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে রিফাতের মা রান্নাঘরে ঘেমে নেয়ে একাকার। সকাল থেকে চুলার পাশে, গোসল করে নতুন কাপড়টা পড়ার এখনো ফুরসত মেলেনি।

ওদিকে ছোট্ট কাজের মেয়েটা বালতিতে করে কাঁচা মাংস আনতে গিয়ে ভার সামলাতে না পেরে সবটা সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছে। রিফাতের মা সব দেখেও মেয়েটাকে বকলেন না, অতটুকু মেয়ের পক্ষে তো আর এ কাজ করা সম্ভব না। হঠাৎ কি মনে হলো তার, ডাক দিলেন – “এই রিফাত!”

কিন্তু ছেলে তো তার ততক্ষনে ঈদের সুন্নাহ পালন করার আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে!

আর এভাবেই বীর বাঙ্গালীর কতিপয় ঈদের সুন্নাহ পালনের আবেগের অন্তরালে সারা বছরের সুন্নাহ, ফরজ সব ঢাকা পড়ে গেছে।

*** বিস্তারিত:

১. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাঁর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে ঈদের নামাযের জন্য বের হতেন। রাসূল (সাঃ) এর হুল্লাহ নামক এক সেট পোশাক ছিল। তিনি সেটি পরে দুই ঈদ এবং জুমার সালাত আদায় করতে যেতেন।

২. ইমাম শাফেয়ি বলেছেন: “রাসূল (সাঃ) দুই ঈদের দিন মদিনার ঈদগাহে যেতেন। তাঁর ওফাতের পরেও সবাই সেটাই পালন করত; যদি না বৃষ্টি বা এ জাতীয় অন্যকোন প্রতিবন্ধকতা না থাকতো।”

মেয়েদের ঈদগাহে যাওয়া প্রসঙ্গে সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত আছে – “উম্মু আতিয়্যাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমাদেরকে নবী (সা:) আদেশ করেছেন, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা মেয়েদেরকে ও পর্দানশীন মেয়েকে ঈদের নামাযে যাওয়ার জন্য বলি এবং তিনি ঋতুবতী নারীদেরকে আদেশ করেছেন তারা যেন মুসলিমদের সালাতের স্থান থেকে কিছুটা পৃথক থাকে।” [মুসনাদ আহমদ-৫/৮৫, সহীহুল বুখারী-১/৯৩, সহীহ মুসলিম-২/৬০৫-৬০৬ (হা: ৮৯০)।

৩. তাকবীরে তাশরীক হল – আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার , ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ঈদুল আযহার দিন উল্লেখিত তাকবীরটি পুরুষদের ক্ষেত্রে সশব্দে পড়া ভালো।

জিলহজ্জের নয় তারিখ ফজর হতে তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফজর সালাত শেষে এই তাকবীর অন্তত একবার পড়া ওয়াজিব।

৪. যুবাইর বিন নুফাইর হতে বর্ণিত: যখন সাহাবীগণ পরস্পরের সাথে ঈদের দিন মিলিত হতেন, তারা বলতেন – তাকাব্বালাল্লাহু মিননা ওয়া মিনকুম। (আল ফাতহ, ২/৪৪৬)

৫. রাসূল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করতে যাওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। ইমাম বুখারী (৯৫৩) আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।”

পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার দিন তিনি ঈদগাহ থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত কিছু খেতেন না। তিরমিজিতে বর্ণিত আছে, তিনি ঈদুল আজহার দিন কুরবানিকৃত পশুর মাংস দিয়ে প্রথম আহার করতেন।

৬. ইবনে মাজাহ (১২৯৫) ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পায়ে হেঁটে ঈদের নামাযে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদের নামায থেকে ফিরে আসতেন।”

সহীহ বুখারী অনুযায়ী (৯৮৬)- জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত: “ঈদের দিন রাসূল (সাঃ) আসা ও যাওয়ায় আলাদা আলাদা রাস্তা ব্যবহার করতেন।”

৭. জাবের (রাঃ) বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম।তিনি খুতবার আগে আযান ও ইক্বামাত ছাড়া সালাত শুরু করলেন।নামাযের পর বিলালের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি আল্লাহকে ভয় করার আদেশ দিলেন, আনুগত্য করার ব্যাপারে উৎসাহিত করলেন, মানুষকে নসীহত করলেন, আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।” [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]

আবু দাউদ (১১৫৫) আবদুল্লাহ ইবনে আল-সায়িব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি সালাত আদায় শেষ করে বললেন, “আমরা এখন খুতবা দিব। আপনাদের কেউ ইচ্ছা করলে বসে শুনতে পারেন। আর কেউ চাইলে চলে যেতে পারেন।”

আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

…………….


বিনতে আব্দুল্লাহ
২২ আগষ্ট ২০১৮