আমাদের সবার মা বাবারাই অন্তত আট দশ ভাই বোন ছিলেন, বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একরাশ খালা-ফুপু-চাচা-মামার অবারিত ভালোবাসা!
.
মায়ের সাথে কখনো ঝগড়া হলে, খালাই মায়ের মত আদর করেছে। কারো বাবা ব্যস্ত থাকলে হয়তো চাচারাই বেড়াতে নিয়ে গেছে।
.
আর নিজের ভাই বোনের সাথে সাথে বোনাস হিসেবে পেয়েছি ডজন খানেক কাজিন! এখনো কাজিন রা একসাথে হলে, বাড়ি মাতিয়ে ফেলতে দু মিনিটও লাগে না!
.
কিন্তু বর্তমান এ আমাদের জেনারেশনে সবার দুটো করে ছেলেমেয়ে! অনেকে আবার একটিতেই সন্তুষ্ট!
.
কারন হিসেবে সবাই বলবে, বেশি বাচ্চা পালতে পয়সা বেশি লাগে! (যদিও আগের দিনে বছরে দু তিনটে কাপড় দিয়ে বাচ্চা বড় করা যেত, টেবিলে দু পদের তরকারি তেই সবাই তৃপ্তি করে খেয়ে নিত। আজকাল দুজন সন্তানের পেছনেই দশ সন্তানের বেশি খরচ করা হচ্ছে! তাই আমার কাছে, বেশি সন্তানে খরচ বেশি, এ যুক্তি কেন যেন গ্রহণ যোগ্য লাগে না)।
.
কারো কাছে হয়তো অনেক বাচ্চা ঝামেলা লাগে! কিংবা কয়েকটি সন্তান থাকা এখন ঠিক আর ফ্যাশনসম্মত নয়। অনেকে আরো বলে আজকাল অশিক্ষিত খ্যাতরাই অনেক সন্তান নিয়ে পরিবার গঠন করে!!
.
আবার এখনকার স্বামী স্ত্রীরা অনেক আরাম প্রিয়। তাদের কাছে নিজেদের ক্যারিয়ার আর বিলাস ব্যাসনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ! সন্তানের ভবিষ্যৎ বলতে তারা কেবলই বোঝেন, তাদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের জন্য হাই ফ্যাশনের গ্যাজেট কেনা, মেধা না থাকলে, পয়সা দিয়ে হলেও বিদেশের ইউনিভারসিটিততে পড়ানো, ইত্যাদি ইত্যাদি!
.
কিন্তু অভিভাবকরা বোঝেন না যে, তারা যখন এই দুনিয়াতে থাকবেন না, তখন তাদের ছেলেমেয়েদের ভালোবাসার জন্য আর কোন আপন জন থাকবে না। নি:সীম একাকী জীবন হবে তাদের। ভাই বোন আর আত্মীয়স্বজন এর ভালো বাসা যে সুখানুভূতি দিতে পারে, কাড়ি কাড়ি অর্থ সেই অপার্থিব সুখ কখনোই দিতে পারে না!!
.
আসলে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, জন সংখ্যার আধিক্যই সব সমস্যার মূল! যদিও মূল সমস্যা হল সম্পদের অসম বন্টন! আল্লাহ্ কিন্তু রিযিক দিয়েই সবাইকে দুনিয়াতে পাঠান। কিয়ামতের দিন রাসুল (সা:) তার উম্মতের সংখ্যা নিয়ে গরব করবেন। সুতরাং উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রাখা সম্মানের বিষয়!
.
যাই হোক কাহিনীতে আবার ফেরত আসি। এখন দু সন্তানের যুগ ধীরে ধীরে এক সন্তানের যূগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো একজন মামা অথবা খালা অথবা চাচা অথবা ফুপু পাবে। একটি কি দুটো কাজিন পাবে।
.
আর তার পরবর্তী প্রজন্ম এটুকুও পাবে না।! এই ভাবনা টা কেমন যেন দম বন্ধ কর লাগে! তাদের ঈদ, যেকোন উতসব বা বিয়ে শাদীতে তখন আপন কেউই থাকবে না!
.
অনেক ভাইবোনের আনন্দ আমরাই কখনো পাই নি, ওরা তো এক ঝাক কাজিন ও পাবে না!! ইস কি একা আর স্বার্থপর এর মত সেল্ফ সেন্টারড জীবন হবে তাদের!!
.
ভাবলেই কেমন আতংকজনক আর সাফোকেটিং লাগছে!!! হঠাত মনে হচ্ছে ভাগ্যিস আমি আরো একশ বছর পর জন্মাইনি!
আপনজন
হাসনিন চৌধুরী
১০ নভেম্বর ২০১৮