কোথাও বেড়াতে গেলে মেজবানের আতিথেয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর মজাদার খাবার, থাকার অবস্থা,আড্ডাবাজি এসব গুরুত্বের চোখে দেখা হয়।
তবে সেই মেহমান যখন ছোট শিশু, তখন খাবারের আইটেম, নতুন বিছানা এসব কিচ্ছুই তার কাছে গুরুত্ব পায় না। তার জন্য দরকার আলাদা স্পেস, রিল্যাক্স টাইম, নিজের রুটিন মতো খাওয়া-ঘুম।
কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যাপার গুলোতে আমরা খুবই বেখেয়াল।
বাচ্চা নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে প্রথম সমস্যা বাচ্চাকে দিয়েই শুরু হয়। কোলে নেয়া নিয়ে টানাটানি, আদর করতে যেয়ে ব্যাথা দেয়া, নেগেটিভ মন্তব্য ইত্যাদি নানান রকমের অবস্থা গুলো বাচ্চার জন্য এক প্রকার টর্চার বলা চলে। একেতো বাচ্চাটা নতুন জায়গায় এসেছে, নতুন মানুষ নতুন পরিবেশ সেই সাথে জার্নি করে এসে সে ক্লান্ত। কিন্তু আদরের আদিখ্যেতায় সেগুলোকে পাত্তাই দেওয়া হয় না। ফলে বাচ্চার এডজাস্টমেন্ট পাওয়ার ফেইল হয়ে সে অসুস্থতার দিকে চলে যায়।
সময় মতো খাওয়া হচ্ছে না,হলেও খাওয়ার সময় অন্যদের আদরের অত্যাচার, ঘুমের সময় শোরগোল, যে আসে সে ই বাচ্চার ইচ্ছে অনিচ্ছায় কোলে নেয়ার টানাটানি এসবের ফলে, অতিরিক্ত কান্না, না খাওয়া, খারাপ মেজাজ বাচ্চাকে মানসিক, শারীরিক সব দিক থেকে দুর্বল করে দেয়।
বাসায় ফিরে আসার আগেই বাচ্চা হচ্ছে অসূস্থ।
আহ…. কি যে এসব কষ্ট এবং তার পরিমাণ মা কে কতোটা যে পোহাতে হয় তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
সারাক্ষণ কলজে ধুক ধুক করতে থাকে বাচ্চাটা না অসুস্থ হয়ে যায়,আবার সেই সাথে লোকের মন্তব্য তো আছেই।
‘কি বাচ্চা? কারো কোলে আসে না!’ ‘এতো কাঁদে কেন?’
‘কি শুকনারে,খাওয়াস না কিছু?’ ‘মা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না, এ কেমন কথা?’ ‘বেড়াতে আসলে বাচ্চা হাসবে,তা না কাঁদে!’ ‘আমাদের পছন্দ হয় না? আমাদের বাসা কি খারাপ?’
উফফ…. আরো কতো যে কহিতে জানেন উহারা,তাহা কেবলই মহাকাব্য বটে!
আমার মতো নতুন মা যারা আছেন,স্পেশালি এদিক দিয়ে তাদের জন্য এমন কঠিন অবস্থা গুলোতে অনেক অনেক দুয়ার আহ্বান রইলো। বেশী করে নিজের এবং বাচ্চার জন্য দুয়া করবেন, আর যতোটা সম্ভব সতর্ক থাকার চেষ্টা করবেন। আত্নীয়তার সম্পর্কে তিক্ততা আসুক,দূরত্ব বাড়ুক তা কেউ ই চায় না। কিন্তু এই অবস্থাগুলো পরিবর্তন করা সহজ না, কারণ এগুলো একদিনে বদলাবেও না আবার এসব থেকে বাচ্চাকে প্রোটেক্ট করাটাও অনেক বেশি কঠিন এবং এর পরবর্তী রেজাল্ট আরো ভয়াবহ।
তাই দুয়া এবং সর্বোচ্চ চেষ্টাই এখন উপায়।
ক্ষুদে মেহমান
-শুকনো পাতা