আনিতা হন্তদন্ত হয়ে বের হলো বাসা থেকে। দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক। সকাল বেলা এক মিনিট দেরি হওয়া মানে এক ঘণ্টা দেরি হওয়ার সমান। অফিসের গাড়িটা বুঝি আর ধরতেই পারবে না আজ।
গেইট দিয়ে বের হচ্ছে আর মনে মনে আল্লাহ্র কাছে দুআ করছে অফিসের গাড়িটা যেন সময়মত পেয়ে যায়। কয়েক পা হাটতেই দেখে একটা খালি রিক্সা এগিয়ে আসছে। সে হাত উচু করে ইশারা দিল রিক্সাওয়ালাকে। তার সামনের মেয়েটাও চিৎকার করে ডাকলো, “এই খালি যাবে নাকি!”।
এই এলাকার রিক্সাওয়ালাদের নিয়ম হচ্ছে, যে আগে ডাকবে তার কাছেই রিক্সা যাবে। রিক্সাওয়ালা আনিতার সামনের মেয়েটাকে ক্রস করে আনিতার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা পিছন ফিরে মন খারাপ করে আনিতার দিকে তাকালো।
রিক্সায় উঠেই আনিতা বললো, রাজলক্ষ্মী চলেন। মেয়েটার দিকে তাকালো সে, মেয়েটা হাটতে আরম্ভ করেছে। রিক্সাওয়ালা যখন মেয়েটার কাছে চলে আসলো, আনিতা রিক্সাওয়ালাকে থামতে বললো।
“কোথায় যাবেন?” জিজ্ঞেস করলো মেয়েটাকে।
মেয়েটা উত্তর দিল, “রাজলক্ষ্মী”।
“উঠে আসুন, আমিও রাজলক্ষ্মী যাচ্ছি।” বললো আনিতা।
ইতস্তত করছে মেয়েটি।
“দেড়ি করছেন কেনো? চলে আসুন”, তাড়া দিলো আনিতা।
মেয়েটা উঠে এলো রিক্সায়।
আনিতা গল্প করছে মেয়েটার সাথে। গার্মেন্টেসে কাজ করে মেয়েটা। টুকটাক গল্প করতে করতেই গন্তব্য স্থানে পৌছে গেলো তারা। আনিতা ভাড়া দিয়ে দিলো। মেয়েটা দিতে চাচ্ছিল, আনিতা দিতে দেয়নি। কৃতজ্ঞতার ছাপ মেয়েটার মুখে। হাসি বিনিময় করে দুজন দুজনের জায়গায় চলে গেলো।
এরপরের দিন সকালবেলায় আনিতার রিক্সায় আরেকজন মেয়েকে দেখা যায়। সে এখন প্রতিদিন নিয়ম করে কোনো এক মেয়েকে তার রিক্সায় তুলে নেয়। কারণ সকালবেলা রিক্সা পাওয়া খুব কঠিন। একজনকে সময়মত তার গন্তব্যে পৌছাতে সাহায্য করলে আল্লাহ্ নিশ্চয় খুশি হবেন, এই চিন্তাই করে আনিতা। প্রতিদিন একজন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয় তার। একেকটা মানুষ যেনো একেকটা বই। পথে যেতে যেতে একেকজনের জীবনের গল্প শুনে সে। সকালবেলার এই ৫/৬ মিনিট সে খুব উপভোগ করে। মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প শুনে, আর নিজেকে পরিমাপ করে। অনুভব করে আল্লাহ্ তাকে কত ভালো রেখেছেন। আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানায় সে মনে মনে।
একদিন খুব দেরি হয়ে গেলো বের হতে। হেটে যাচ্ছে, কোনো রিক্সা নেই রাস্তায়। হাটতে হাটতে দেখে দূরে একটা রিক্সা। হাত দিয়ে ইশারা দিল। রিক্সাওয়ালা তার কাছে এসে থামলো না। তার পিছনে যে মেয়েটা ছিল তার কাছে এসে রিক্সা থামলো। তারমানে মেয়েটা আগে ইশারা দিয়ে ডেকেছে। পিছনে ফিরে তাকালো আনিতা। মেয়েটা উঠে গেলো রিক্সায়। দ্রুত হাটতে শুরু করলো আনিতা। অফিসের গাড়ি মিস করা যাবে না।
রিক্সাটা হঠাৎ তার সামনে এসে থামলো। মেয়েটা আনিতাকে বলছে, “চলে আসুন আপু, আপনি না রাজলক্ষ্মী যাবেন? আপনি কিন্তু একদিন আমাকে আপনার রিক্সায় নিয়ে গিয়েছিলেন।”
বিশ্বাস করতে পারছে না আনিতা। রিক্সায় উঠে বসলো সে। ভয় এবং খুশী একসাথে তার মনে।
আল্লাহ্ কি তার ভালো কাজের প্রতিদান এই দুনিয়াতেই দিয়ে দিচ্ছেন? এজন্য ভয় পাচ্ছে সে। আবার খুশীও লাগছে, আল্লাহ্ তার প্রয়োজন ধারণাতীত উৎস থেকে মিটিয়ে দিয়েছেন।
……………………
প্রতিদান
তাহনিয়া ইসলাম খান
( ১৬ জানুয়ারী ২০১৮)