আলো-আঁধারির বাসিন্দা


টেবিলের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে আব্দুল্লাহ। অন্ধকার ঘর, হালকা নীল ডীম লাইটের আলো ভুতুড়ে একটা পরিবেশ তৈরী করেছে। আব্দুল্লাহর ভয় লাগছে না, এমন পরিবেশেই ও অভ্যস্ত। আলো সহ্য হয় না ওর। তনু যে বাথরুমে গেল এখনো আসছে না। আব্দুল্লাহ অপেক্ষা করছে। কাঠের আলমারিটা অদ্ভুত ছায়া তৈরি করেছে। তনুর বিছানো জায়নামাযটার উপর আলো ছায়ার খেলা চলছে। মনের ভেতর ইবাদত করার ইচ্ছাটা উকি দেয় জায়নামাজ দেখলে, তনুর আশেপাশে আব্দুল্লাহরও সিজদাবনত হতে ইচ্ছা করে। বিছানা থেকে একটু দূরে ফ্যানটা। ফ্যানের নিচে চেয়ার রাখা।

চেয়ারের উপর তনুর ওড়না দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে আছে। আব্দুল্লাহর ক্ষিধে পাচ্ছে। বাড়িতে ঢুকেছে থেকে খায়নি কিছু। ড্রেসিং টেবিলের উপর চকচকে ছুরিটা পড়ে আছে। ফল কাটার ছুরি, ধার নেই তেমন। দরজায় খুট করে শব্দ হয়, ডান পা রাখে রুমের ভেতর তনু। বিড়বিড় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আব্দুল্লাহ ফিরে তাকায়। ওযু করে এসেছে তনু। কপাল গাল বেয়ে পানি পড়ছে। তয়লা দিয়ে মুখ হাত মুছে নিয়ে পুরো শরীর ঢেকে নামাযে দাঁড়ায় তনু।

আব্দুল্লাহর শ্বাসকষ্টটা আবার শুরু হয়। এসময় বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ে। বাবা-মা দুজনেই খুব আল্লাহভীরু ছিলেন। তনু রুকুতে আসতেই আব্দুল্লাহর অস্থিরতা বেড়ে যায়। মনকে অন্যদিক ফিরাতে নতুন অফিসের বসের কথা ভাবে সে। বসের মত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কাউকে ও খুব কমই দেখেছে। প্রচন্ড শ্রদ্ধা করে তাকে ও। বসের জন্যেই না খেয়ে না ঘুমিয়ে নতুন কাজটা নিয়েছে ও। বস ভীষণ উৎসাহ দেন কাজের ব্যাপারে, আব্দুল্লাহর মন মগজ সব চাংগা হয়ে যায় । বস আশরাফ ভাইয়ের সাথেই আজ ডিনার করার কথা। তনু কবেই বা ওর জন্যে খাবার রেখেছে। তনু রুকু থেকে উঠে দাঁড়ায়। সিজদায় যাচ্ছে। আব্দুল্লাহ আর সহ্য করতে পারেনা। তনুর কান্না আসমানে গিয়ে পৌছায়। আব্দুল্লাহর মনে হয় তীব্র আলোকছটা ওর মগজটা চিড়ে দিচ্ছে। ছিটকে বের হয়ে আসে সে তনুর রুম থেকে। আজ আর সম্ভব না। ধানমন্ডির দিকে এক রেস্টুরেন্টে চলে আসে ও। রাত দেড়টা, তবু আশরাফ ভাই অপেক্ষায় আছেন। আশরাফ আব্দুল্লাহকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। টেবিলে চিকেন ললিপপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর বিয়ার। আরো দুই ভদ্রলোকের সাথে বসে যায় আশরাফ আর আব্দুল্লাহ। কাজের আপডেট দিতে থাকে আব্দুল্লাহ। সে হতাশ হলেও আশরাফ ভাই পিঠ চাপড়ে দেয়।


মলিন মুখে মেকি হাসি ধরে রেখে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে তনু। পাশের বাসার ভাবি তার সিংগাপুর ভ্রমণের গল্প বলে যাচ্ছে। বিসমিল্লাহ না বলে চা খাওয়ায় তনুর সর্বক্ষণ সংগী জ্বীন আর স্পেশাল মিশনে থাকা আব্দুল্লাহ ভাবির চা থেকে খেয়ে যাচ্ছে। নিজেদের মত গল্প করছে দুই জ্বীন।

কারীন: কাল তো ভেবেছি সুইসাইডই করবে তনু। যেভাবে হঠাৎ দেয়ালে মাথা বাড়ি দিচ্ছিল। আমি উৎসাহ দিয়েই গেছি। আর তুমি যা যা করছো তাতো অতুলনীয়। আচ্ছা তোমার অফিসটা কী বিদেশি কোনো কোম্পানির?

আব্দুল্লাহ: ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি এটা। পীর কবিরাজ এদের সাথে লিনক। দেশ বিদেশ সব জায়গায়ই তো এদের অভাব নাই। দেশের কবিরাজরা আমাদের বসের নামে মিনিমাম একটা মুরগী জবাই করে লিংকড আপ হয়, আর বিদেশে যে কত কিছু করে চিন্তাও করতে পারবে না। যত অমুসলিম ডেভিল ওরশিপার আছে সবগুলাই একেকটা সাইকোপ্যাথ।

: তো তনুর পিছে লাগলে কেন?

: গু বাবাকে চিনো না? ও আমার বসের সাথে ডিল করেছে। তনুর ক্ষতি করা দরকার। ওর কোন আত্মীয় গু বাবার কাছে গিয়েছিল। ভালোই টাকার লেনদেন হয় এসব কারবারে।

: হাহা। সব মানুষেরই এক পিস আত্মীয় থাকেই এমন, একদম মাস্টারপিস। আত্মীয়রা অযথাই কষ্ট করে। নফস আর আমাদের ওয়াসওয়াসাতেই ওরা জবুথবু। টাকা খরচ আর মেহনত….. আচ্ছা তোমার নাকি প্রমোশন হচ্ছে?

: প্রমোশন বলবো নাকি বুঝছি না। সাইমনের পজিশনে আমি যাচ্ছি। সাইমন রাক্বীর কাছে ধরা খেয়েছে জানো তো। ওর চাকরি চলে গেছে। আর করাও সম্ভব না ওর। মার খেয়েছে ভালোই। মাটির মানুষরা একবার রুখে দাঁড়ালে আগুনের জ্বীনরা পারবে কিভাবে? সৃষ্টির সেরা জীব বলে কথা!

: হুম (দীর্ঘশ্বাসের সাথে)! সামান্য তনুকেই আমার ভয় লাগে আর রাক্বী! কুরআন পড়ে পড়ে ঝাড়বে!। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়!

: হাহা! আমি রাক্বীদের থেকে বেশ কয়েকবার পালিয়েছি। রাক্বীদের চেম্বারে ভালোই মজা হয়। মানসিক রোগীরাও আসে। আবোল তাবোল খেয়ে পেটে গ্যাস হয়ে ব্যাথা করলেও ভাবে নজর, জ্বীনের উৎপাত, সবাইকে যাদুটোনাকারী ভাবতে থাকে।পাগলের কারীন বসে বসে খিলখিল করে হাসে…..
আজ উঠি ভাই। তোমার কাছে তনুর অতীতটাতো জানা হলোই। ভবিষ্যৎ জানার একটা চেষ্টা করে দেখি।
তনুর কারীন বিস্মিত হয়। সময় না দিয়ে আব্দুল্লাহ শাই করে বের হয়ে পড়ে।


আব্দুল্লাহর একমাত্র পোষা প্রাণী স্যাম। কাল যত্ন করে স্যামের জন্যে গরুর গোবর সংগ্রহ করেছে। স্যাম আরাম করে খাচ্ছে আর আনন্দে গর্জন করছে। পরম স্নেহের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ওর গায়ে আব্দুল্লাহ। তনুকে কাল ঘায়েল করতে পেরে অনেকটাই ভালো লেগেছে। তনু টয়লেটে দুআ না পড়েই ঢুকেছিল, আব্দুল্লাহও সাথে সাথে ঢুকে যায়। নাপাক জায়গায় ঘায়েল করা আরো সহজ, তনুর হতাশা মূহুর্তেই আরো বাড়িয়ে দেয় ও।

বিকারগ্রস্তের মত মাথা বাড়ি দিতে থাকে দেয়ালে। একটা সময় বের হয়ে এসে নিস্তেজ শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। একটু একটু করে তনুকে ভেংগে গুড়িয়ে দিতে পারছে আব্দুল্লাহ।

তৃপ্তির ঢেকুর তুলে স্যাম। গোবর খাওয়া শেষ। প্রস্তুত হয়ে নেয় আব্দুল্লাহ। একটু পরেই মিশনে বের হতে হবে। আশরাফ ভাই তনুর অতীতটা গু বাবার কাছে সাবমিট করেছে। গু বাবা তার কাস্টোমারকে তনুর অতীত বলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বাবার প্রতি আস্থা আরো বেড়ে গেছে তার। এবার ভবিষ্যৎ জানার আবদার করে বসেছে, কবে ধ্বংস হবে তনু।!

আব্দুল্লাহ শাই শাই করে উঠে যাচ্ছে উপরে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে চলে এসেছে। কালপুরুষটাকে আরো অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। চাঁদ ঘুরে চলছে পৃথিবীর চারপাশে। খেলাচ্ছলে চাঁদকে ঘিরে দুই পাক দিয়ে নেয় আব্দুল্লাহ। প্রথম আসমানের প্রান্ত সীমায় আসতেই বুক ধড়ফড় শুরু হয়। কান পেতে শোনার চেষ্টা করে ভিতরের কথাবার্তা। সপ্তম শতাব্দী থেকে পাহাড়া জোরদার হয়ে গেছে। এই একুশ শতকে এসেও ভবিষ্যৎ জানাটা কঠিনই রয়ে গেছে। গায়েবের খবর যে কেবল আল্লাহই জানেন। ফেরেশতাদের কথা অল্প কানে আসতেই মুহুর্মুহু অগ্নিপিন্ডের আক্রমণে নিচের দিকে জ্ঞান হারিয়ে পড়তে থাকে আব্দুল্লাহ। নাসা এই অগ্নিপিন্ড ডিটেক্ট করতে পারলে কী নাম দিবে? আনআইডেন্টিফাইড অবজেক্ট নাকি উল্কা? খালি চোখে আকাশের তারা খসতে দেখলে কেউ হয়তো মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করবে ক্ষমতাহীন খসে পড়া তারার কাছে।

বিপর্যস্ত অবস্থায় পদ্মায় ছোট্ট এক ট্রলারে চলে আসে আব্দুল্লাহ। এই ট্রলারই আশরাফ ভাইয়ের ডেরা। আজ ওদের স্পেশাল মিটিং। গু বাবা আশরাফ ভাইকে সিজদা করছে। কেমন গা গুলায় আব্দুল্লাহর। পরহেজগার মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসেছে বলেই কিনা কে জানে,এত হারামে যুক্ত থাকার পরও শিরকটা ঠিক মেনে নিতে পারে না। ট্রলার ভাসছে শান্ত পদ্মায়। অন্ধকার হয়ে আছে আকাশ। চাঁদের দেখা নাই। সামান্যই তথ্য দিতে পারে আব্দুল্লাহ। যার সাথে শত মিথ্যা যোগ করে গু বাবা ভবিষ্যৎবাণী করবে। গু বাবার দিকে তাকায় আব্দুল্লাহ, জটা চুল, গা ভর্তি গু লেপা। খারাপ জ্বীনরা নাপাকি ভালোবাসে। এসব করে জ্বীনদের খুশি করে উনি। ঢাকা শহরে দুইটা ফ্ল্যাট আর একটা পাঁচ তালা বাড়ি আছে গু বাবার। সম্পদ হিসেবে এগুলো কিছুই না। আস্তে আস্তে নিজের অবস্থান করে নিচ্ছে এই শিরক-কুফরির দুনিয়ায়। মিটিং শেষে তনুর রুমে ফিরে যায় আব্দুল্লাহ।

তনু ঘরের আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। আব্দুল্লাহর খুব বিরক্ত লাগছে। তনুর মাথার একটা দিক নীল হয়ে ফুলে আছে। বুকশেলফ থেকে কুরআন নামায় তনু। টিস্যু দিয়ে যত্ন করে ধুলা মুছে। অনেকদিন মুসাফ ধরা হয় না বলে ধুলা পড়ে গেছে। সকাল সন্ধ্যার যিকর ছেড়েছে অনেকদিন। ইচ্ছা করে ছেড়েছে এমন নয়। যিকর করতে গেলেই মাথা শূন্য হয়ে যেত, শত ব্যস্ততার কথা মনে পড়ত, কখনো বুক ধড়ফড় করতো। শুধু দুআ ইউনুসটাই এখনো বিড়বিড় করে পড়ে যায় তনু। অবশ্যই তনুই জালেম আর আল্লাহ সকল খুঁত থেকে মুক্ত।

আব্দুল্লাহ বদ্ধ আলমারির অন্ধকারের ভেতর আরাম করে বসে। তনু কি এবার তিলওয়াত করবে। গা কেপে উঠে। অনেক জরুরি কাজ আর শত হতাশার কথা মনে করিয়ে দেয় আব্দুল্লাহ। তনু আজ এত নির্বিকার কেন!
আল্লাহর নামে শুরু করে তনু। ” আলিফ, লাম, মীম….”
প্রচন্ড হতাশা ঘিরে ধরে আব্দুল্লাহকে। অনেকদিনের অনভ্যস্ততায় আস্তে আস্তে পড়ে তনু। আব্দুল্লাহর মাথায় যেন উপর থেকে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে।

দুইদিন লাগে তনুর সূরা বাকারাহ শেষ করতে।
“হে আমাদের রব আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দিবেন না” তনুর এই দরখাস্ত মঞ্জুর হয়ে যায় চোখের পলকেই। আব্দুল্লাহ চিরদিনের মত বিদায় নেয়, তনুর ঘরে আর নয়। মিশন আনসাকসেসফুল হওয়ায় ওর চাকরি চলে যায়। সে খুব একটা অখুশি না। তনুর সাথে পেড়ে ওঠেনি আব্দুল্লাহ। মেয়েটার জীবনীশক্তি তাকে নতুন করে ভাবায়। ইতস্তত তিলওয়াত কানে বাজে। তওবা করে আবার ইবাদতের জীবনে ফিরে যাবে কিনা ভাবে সে।

তনুর সকাল শুরু হয় জানালা দিয়ে আসা এক চিলতে রোদ দিয়ে। কোনো কোনো সকাল খুব আনন্দময় হয়। কোনো ব্যর্থতাই কষ্ট দিতে পারে না। আর কোনো কোনো বিষণ্ণতার দিনে ব্যর্থতা না থাকলেও নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। বিষন্নতার সাথে লড়তে শিখে গেছে তনু। ফল কাটার ছুরি বা ঘুরন্ত পাখা অন্য কোনো অর্থ বয়ে আনে না আর।

…………………..

সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ:

হাদীসে এসেছে, যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার খাবার নেই ও রাত্রি যাপনও নেই। আর যখন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার রাত যাপন হবে। আর যখন খাবার সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার রাত যাপন ও খাবার দুটোরই ব্যবস্থা হল। (বর্ণনায় : মুসলিম হাদীস নং ২০১৮)

যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,এ সকল প্রস্রাব পায়খানার নোংরা স্থানগুলোতে শয়তানরা উপস্থিত থাকে। যখন তোমাদের কেউ এখানে আসবে তখন যেন সে বলে, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জিন নর ও জিন নারী থেকে আশ্রয় নিচ্ছি) বর্ণনায় : আবু দাউদ
بِسْمِ اللَّهِ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِث
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঘর-কে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল বাকারা তেলাওয়াত করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে দূরে থাকে।
(বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ৭৮০)

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মাঝে মাঝে ফিরিশতারা আকাশের নীচে মেঘমালার স্তর পর্যন্ত অবতরণ করত এবং আসমানের সংবাদাদী নিয়ে পরস্পর আলোচনা করত। শয়তানরা শূন্যে আত্মগোপন করে এসব সংবাদ শুনত এবং গণকদের কাছে তা গোপনে পৌছিয়ে দিত। গণকরা এগুলোর সাথে শত মিথ্যা নিজেদের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে তা বলে বেড়ায়”। [বুখারীঃ ৩২১০, ২২২৮]

সকালে ও সন্ধ্যায় এ দুআটি তিনবার পাঠ করা
أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আউজু বিকালি মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা) অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যাবলীর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় নিচ্ছি। (বর্ণনায় : মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, গত রাতে আমাকে একটি বিচ্ছুতে দংশন করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যখন সন্ধ্যা হবে তখন তুমি বলবে, আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা। তাহলে তোমাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারত না। (বর্ণনায় : মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৯)

একটি প্রতিনিধ দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসল। তারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মত হাড্ডি, গোবর ও কয়লা দ্বারা ইসতেন্‌জা করে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা এ গুলোকে আমাদের জন্য খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এ সকল বস্তু দিয়ে ইসতেন্‌জা করতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)
সনদ সূত্রের দিকে দিয়ে হাদীসের মান হল : ইমাম নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল মাজমু শারহুল মুহাজ্জাব গ্রন্থে লিখেন, এ হাদীসটি আবু দাউদ, দারে কুতনী ও বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ হাদীসটিকে যয়ীফ (দুর্বল সুত্র) বলেননি। কিন্তু দারে কুতনী ও বায়হাকী হাদীসটি দুর্বল সুত্রের বলে অভিমত দিয়েছেন।

আলো-আঁধারির বাসিন্দা
উম্মে লিলি