কাঁচা রাঁধুনি 

-আমাতুর রহমান

রাতের খাবার মুখে তুলিয়া তিনি সিটকাইলেন তাহার নাক,
কাঁদ স্বরে কহিলাম- রাখিয়া দাও, আর খাইতে হইবে না থাক।

সর্দি নাই তবু নাক টানিয়া করিলাম কান্না বিলাস,
শাশুড়িরে তাহার ফোন করিয়া ঘটনা করিলাম ফাঁস।

হায়হায় সে করিলো তখন গুঁজিয়া বালিশে মাথা,
“আরি আরি আরি এই মেয়ের সনে নাই আর কোন কথা।

একেতো বাপু রান্না খারাপ, উলটা তার গোস্বাই বেশি!
শাশুড়িকে কেন এসবে টানিলো, বড্ড যে বদমাশি!”

যাও যাও আরি,বেশি বাড়াবাড়ি ,তেল দিবো তোমায় কেনো
এক বাপের এক কন্যা আমি, আহ্লাদি মোর জানো?

আধ-খাওয়া আধ-খালি পেট নিয়ে ঘুমিয়ে পরিলেন তিনি,
অবশ্য তারই কথা ভাবিতে ভাবিতে গাঁথিতেছি মোর বেনী।

অন্যায় হয়েছে ঘোর অন্যায়,চাহিতে হইবে ক্ষমা,
আহা নাজানি কত যে ক্ষুধা পেটে ছিলো তার জমা!

আম্মু তো সদা অলস ডাকেন,খাইয়াছিতো ফোনে ঝাড়ি,
গুনাহের কাজ তো কথা Pass করা যেথাসেথা বা বাপেরবাড়ি!

সকাল সকাল বিকাশ থাকিয়া টাকা করিয়া রিচার্জ,
এমবি কিনিয়া ইউটিউব গিয়া কত রান্না দিয়াছি সার্চ!

রাঁধিবো আজ সুস্বাদু রান্না,রেসিপি করিয়াছি নোট,
আজ বুঝি হায় বিজয়ের হাসি ছুঁয়ে যাবে মোর ঠোঁট।

যেই না আলুর মাঝ বরাবর, চাকু রাখিয়া করিবো খুন,
এমন সময় আম্মার কল,ছিটাইতে ঘায়ে নুন।

“পইপই করে বলেছি তোমায় রান্নাবান্না শিখো,
এখন তুমি কষ্ট করিয়া রেসিপির নোট লিখো!
ফেসবুক হোয়াটসেপে সময় গুলো করিয়াছিলে তখন সারা,
নাজানি কি কি ভাবিতেছে হায় জামাই বেচারা!!”

ধ্যাত্তিরিকি ফোন কাটিয়া, দিলাম রান্নায় মন,
ওদিক একটু ঢু মেরে দেখি, কেমনে কাটে তার ক্ষণ।

চুপচাপ তিনি চলিলেন কাজে,অভিমান তাহার তাজা!
চোখ তুলিয়া চাহিলেন নাতো,দিতেছেন বড় সাজা।

এমন ভাব ধরিয়াছেন হায় কেমনে ক্ষমা চাই!
সাহস কুলায় না, আচ্ছা থাক, আপাতত চেপে যাই।

যা হোক আমি হেশেলে ফিরিয়া করিতে থাকি কাজ,
এতো বড় মেয়ে রান্না পারি না ইহা যে বড়ই লাজ!

সাঁঝে যবে তিনি ফিরিলেন ঘরে সেরে গেছে তার রাগ,
মুচকি হাসিলেন দেখিয়া আমার কাপড়ে ঝোলের দাগ।

ক্ষমা চাহিলেন আমার কাছে!! অবাক হইয়া গেছি!!!
মুখ আমার এতো হা হইয়াছে ঢুকিয়া না পরে মাছি!

খাওয়া রিলেটেড হাদিস (১) স্মরণ করিয়া চাহিলেন তিনি ক্ষমা,
এইবার মোর চক্ষু কিনারায় জল হইয়াছে জমা।

দোষ তো ছিলো মোর বেশি হায় ক্ষমা নিলাম খুব চেয়ে,
এরপরেতে হেশেল পানে চলিলাম স্পিডে ধেয়ে।

খাইতেছেন তিনি,নাক বরাবর রাখিয়াছি আমি নজর,
সিটকায় নাকি দেখিতো! নাকি বলিবে “রান্না জবর!”

প্রশংসা আজ করিলেন তিনি আহা শুনিলাম পাতিয়া কান,
নাকি আমায় কষ্ট না দিতে ধরিলেন আজ এই ভান?

যা হোক আমি আরও ভালো করিবার, চেষ্টা করিবো প্রিয়,
এই বোকারে সবর করিয়া সুযোগ ও ক্ষমা দিও…

……………….

পরিশিষ্ট:
(১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন।
(সহিহ বুখারি)

1 Comment

Comments are closed.